পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২০
মহাভারত

যাচক তাদেরই তুমি দান কর। এই ব’লে ঋষিরা অন্যত্র চলে গেলেন, তাঁরা যা পাক করছিলেন তা প’ড়ে রইল।

 রাজা শৈব্যের আদেশে তাঁর মন্ত্রীরা বন থেকে উড়ুম্বর (ডুমর) ফল সংগ্রহ ক’রে ঋষিদের দিতে লাগলেন। কিছুদিন পরে রাজা ফলের মধ্যে সুবর্ণ পুরে পাঠিয়ে দিলেন। মহর্ষি অত্রি সেই ফল গুরুভার দেখে বললেন, আমরা নির্বোধ নই, এই সুবর্ণময় ফল নিতে পারি না। ঋষিরা সেই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চ’লে গেলেন। দান প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় শৈব্য ক্রুদ্ধ হয়ে এক যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞাগ্নি থেকে যাতুধানী নামে এক ভয়ংকরী কৃত্যা উত্থিত হ’ল। রাজা সেই কৃত্যাকে বললেন, তুমি অত্রি প্রভৃতি সাত জন ঋষি, অরুন্ধতী, তাঁদের দাস পশুসখ এবং দাসী গণ্ডার কাছে যাও; তাদের নাম জেনে নিয়ে সকলকে বিনষ্ট কর।

 ঋষিরা এক বনে ফলমূল খেয়ে বিচরণ করছিলেন। একদিন তাঁরা দেখলেন, এক স্থূলকায় পরিব্রাজক কুকুর নিয়ে তাঁদের দিকে আসছেন। অরুন্ধতী ঋষিদের বললেন, আপনাদের দেহ এমন পুষ্ট নয়। ঋষিরা বললেন, আমরা খাদ্যাভাবে কৃশ হয়েছি, আমাদের নিত্যকর্মও করতে পারি না; এই পরিব্রাজকের অভাব নেই সেজন্য সে ও তার কুকুর স্থূলদেহ। তার পর সেই পরিব্রাজক নিকটে এসে ঋষিদের করস্পর্শ ক’রে বললেন, আমি আপনাদের পরিচর্যা করব। একদিন সকলে এক মনোহর সরোবরের নিকট উপস্থিত হলেন, যাতুধানী তা রক্ষা করছিল। ঋষিরা মৃণাল নিতে গেলে যাতুধানী বললে, আগে তোমরা নিজেদের নাম ও তার অর্থ বল তার পর মৃণাল নিও। ঋষিগণ অরুন্ধতী গণ্ডা ও পশুসখ নিজ নিজ নাম ও তার অর্থ জানালে যাতুধানী প্রত্যেককে বললে, তোমার নামের অর্থ বুঝলাম না, যা হ’ক, তুমি সরোবরে নামতে পার। অবশেষে পরিব্রাজক বললেন, এঁরা সকলে যেপ্রকারে নিজ নিজ নাম জানালেন আমি তেমন পারব না; আমার নাম শুনঃসখসখ (যম বা ধর্মের সখা)। যাতুধানী বললে, তোমার বাক্য সন্দিগ্ধ, পুনর্বার নাম বল। পরিব্রাজক বললেন, আমি একবার নাম বলেছি তথাপি তুমি বুঝতে পারলে না, অতএব এই ত্রিদণ্ডের আঘাতে তোমাকে বধ করব। এই ব’লে তিনি যাতুধানীর মস্তকে আঘাত করলেন, সে ভূপতিত হয়ে ভস্মসাৎ হ’ল।

 ঋষিরা তখন মৃণাল তুলে তীরে রাখলেন এবং পুনর্বার জলে নেমে তর্পণ করতে লাগলেন। জল থেকে উঠে তাঁরা মৃণাল দেখতে পেলেন না। তখন তাঁরা প্রত্যেকে শপথ ক’রে অপহরণকারীর উদ্দেশে অভিশাপ দিলেন। পরিশেষে শুনঃসখ এই শপথ করলেন—যে চুরি করেছে সে বেদজ্ঞ বা ব্রহ্মচর্যসম্পন্ন ব্রাহ্মণকে