পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬২১

কন্যাদান করুক এবং অথর্ববেদ অধ্যয়ন ক’রে স্নান করুক। ঋষিরা বললেন, তুমি যে শপথ করলে তা সকল ব্রাহ্মণেরই অভীষ্ট, তুমিই আমাদের মৃণাল চুরি করেছ। শুনঃসখ বললেন, আপনাদের কথা সত্য, আপনাদের পরীক্ষার জন্যই এমন করেছি। এই যাতুধানী রাজা শৈব্য-বৃষাদর্ভির আজ্ঞায় আপনাদের বধ করতে এসেছিল; আমি ইন্দ্র, আপনাদের রক্ষা করেছি। আপনারা সর্ববিধ প্রলোভন প্রত্যাখ্যান ক’রে ক্ষুধা সহ্য করেছেন, সেজন্য সর্বকামপ্রদ অক্ষয় লোক লাভ করবেন। তখন সকলে আনন্দিত হয়ে ইন্দ্রের সঙ্গে স্বর্গে গেলেন।

১৫। ছত্র ও পাদুকা—পুষ্প ধুপ ও দীপ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, শ্রাদ্ধাদিতে যে ছত্র ও পাদুকা দেওয়া হয় তার প্রবর্তন কি প্রকারে হ’ল? ভীষ্ম বললেন, একদা জ্যৈষ্ঠ মাসে মধ্যাহ্নকালে মহর্ষি জমদগ্নি ধনু দ্বারা শর নিক্ষেপ ক’রে ক্রীড়া করছিলেন, তাঁর পত্নী রেণুকা সেই শর তুলে এনে দিচ্ছিলেন। প্রখর রৌদ্রে রেণুকার কষ্ট হ’তে লাগল। তাঁর বিলম্ব দেখে জমদগ্নি ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তোমার শর আনতে বিলম্ব হ’ল কেন? রেণুকা বললেন, সূর্যকিরণে আমার মস্তক ও চরণ সন্তপ্ত হয়েছিল, আমি বৃক্ষের ছায়ায আশ্রয় নিয়েছিলাম। জমদগ্নি দিব্য ধনু ও বহু শর নিয়ে সূর্যকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন। তখন দিবাকর ব্রাহ্মণের বেশে এসে বললেন, ব্রহ্মর্ষি, সূর্য আকাশে থেকে কিরণ দ্বারা রস আকর্ষণ করেন এবং বর্ষায় সেই রস বর্ষণ করেন, তা থেকে অন্ন উৎপন্ন হয়। সূর্যকে নিপাতিত ক’রে তোমার কি লাভ হবে? সূর্য, আকাশে স্থির থাকেন না, তাঁকে তুমি কি ক’রে বিদ্ধ করবে? জমদগ্নি বললেন, আমি জ্ঞাননেত্র দ্বারা তোমাকে জানি, মধ্যাহ্নে তুমি অর্ধ নিমেষ কাল স্থির থাক, সেই সময়ে তোমাকে বিদ্ধ করব। সূর্য বললেন, আমি তোমার শরণ নিলাম। জমদগ্নি সহাস্যে বললেন, তবে তোমার ভয় নেই; কিন্তু এমন উপায় কর যাতে লোকে রৌদ্রতাপিত পথ দিয়ে বিনা কষ্টে যেতে পারে। তখন সূর্য জমদগ্নিকে ছত্র ও পাদুকা দিয়ে বললেন, মহর্ষি, এই দুইএর দ্বারা আমার তাপ থেকে মস্তক ও চরণ রক্ষিত হবে।

 আখ্যান শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, যুধিষ্ঠির, সূর্যই ছত্র ও পাদুকার প্রবর্তক, ব্রাহ্মণদের দান করলে মহান ধর্ম হয়। তার পর ভীষ্ম দেবার্চনায় পুষ্প ধূপ ও দীপের উপযোগিতা প্রসঙ্গে বললেন, পুষ্প মনকে আহ্লাদিত করে সেজন্য