পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২২
মহাভারত

তার নাম সুমনাঃ। কণ্টকহীন বৃক্ষের শ্বেতবর্ণ পুষ্পই দেবতাদের প্রীতিকর। পদ্মাদি জলজ পুষ্প গন্ধর্ব নাগ ও যক্ষগণকে প্রদেয়। কটু ও কণ্টকময় ওষধি এবং রক্তবর্ণ পুষ্প শত্রুদের অভিচারের জন্য অথর্ববেদে নির্দিষ্ট হয়েছে। ধূপ তিন প্রকার; গুগ্‌গুল, প্রভৃতিকে নির্যাস, কাষ্ঠময় ধূপকে সারী, এবং মিশ্রিত উপাদান থেকে প্রস্তুত ধূপকে কৃত্রিম বলে। নির্যাসের মধ্যে গুগ্‌গুল, শ্রেষ্ঠ, সারী ধূপের মধ্যে অগুরু শ্রেষ্ঠ। শল্লকী[১] ও তজ্জাতীয় নির্যাসের ধূপ দৈত্যদের প্রিয়। সর্জরস (ধুনা) ও গন্ধকাষ্ঠ প্রভৃতির সংযোগে যে কৃত্রিম ধূপ হয় তা দেব দানব মানব সকলেরই প্রীতিকর। দীপ দান করলে মাননুষের তেজ বৃদ্ধি পায়, উত্তরায়ণের রাত্রিতে দীপদান কর্তব্য।

১৬। সদাচার—ভ্রাতার কর্তব্য

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, মানুষকে শতায়ু ও শতবীর্য বলা হয়, তবে অকালমৃত্যু হয় কেন? কি করলে মানুষ আয়ু কীর্তি ও শ্রী লাভ করতে পারে? ভীষ্ম বললেন, যারা দুরাচার তারা দীর্ঘ আয়ু পায় না, যে নিজের হিত চায় তাকে সদাচার পালন করতে হবে। প্রত্যহ ব্রাহ্ম মুহূর্তে উঠে ধর্মার্থচিন্তা ও আচমন ক’রে কৃতাঞ্জলি ও পূর্বমুখ হয়ে পূর্বসন্ধ্যার উপাসনা করবে। উদীয়মান ও অস্তগামী সূর্য দেখবে না; রাহুগ্রস্ত, জলে প্রতিফলিত এবং আকাশমধ্যগত সূর্যের দিকেও দৃষ্টিপাত করবে না। মূত্র-পুরীষ দেখবে না, স্পর্শও করবে না। একাকী অথবা অজ্ঞাত বা নীচজাতীয় লোকের সঙ্গে চলবে না। ব্রাহ্মণ গো রাজা বৃদ্ধ ভারবাহী গর্ভিণী ও দুর্বলকে পথ ছেড়ে দেবে। অন্যের ব্যবহৃত পাদুকা ও বস্ত্র পরবে না। বৃথা মাংস এবং পৃষ্ঠদেশের মাংস খাবে না। সশব্দে ভোজন করবে না। মর্মভেদী বাক্য বলবে না; মুখ থেকে যে বাক্যবাণ নির্গত হয় তা কেবল মর্মস্থলেই বিদ্ধ হয়, তার আঘাতে লোকে দিবারাত্র দুঃখ পায়। কুঠার প্রভৃতিতে ছিন্ন বন আবার অঙ্কুরিত হয়, কিন্তু দুর্বাক্যজনিত হৃদয়ের ক্ষত সারে না। বাণ নারাচ প্রভৃতি অস্ত্র দেহ থেকে উদ্ধার করা যায়, কিন্তু বাক্‌শল্য হৃদয় থেকে তুলে ফেলা যায় না। হীনাঙ্গ অতিরিক্তাঙ্গ বিদ্যাহীন রূপহীন নির্ধন বা দুর্বল লোককে উপহাস করবে না। পিষ্টক মাংস পায়স প্রভৃতি উত্তম খাদ্য দেবতার উদ্দেশেই প্রস্তুত করবে, কেবল নিজের জন্য নয়। গর্ভিণী স্ত্রীতে গমন করবে না। পূর্ব বা দক্ষিণ দিকে মস্তক

  1. শলই, লবান বা শিলারস জাতীয়।