পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
মহাভারত

শুনলেন, আমি নিজেও ওই বালককে পুত্র ব’লে জানি, কিন্তু যদি কেবল শকুন্তলার কথায় তাকে নিতাম তবে লোকে দোষ দিত। তার পর দুষ্মন্ত তাঁর পুত্র ও ভার্যা শকুন্তলাকে আনন্দিতমনে গ্রহণ করলেন। তিনি শকুন্তলাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, দেবী, তোমার সতীত্ব প্রতিপাদনের জন্যই আমি এইরূপ ব্যবহার করেছিলাম, নতুবা লোকে মনে করত তোমার সঙ্গে আমার অসৎ সম্বন্ধ হয়েছিল। এই পত্রকে রাজ্য দেব তা পূর্বেই স্থির করেছি। প্রিয়ে, তুমি ক্রোধবশে আমাকে যেসব অপ্রিয় কথা বলেছ তা আমি ক্ষমা[১] করলাম।

১৫। মহাভিষ—অষ্টবসু—প্রতীপ—শান্তনু-গঙ্গা

 দুষ্মন্ত-শকুন্তলার পুত্র ভরত বহু দেশ জয় এবং বহুশত অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান ক’রে সার্বভৌম রাজচক্রবর্তী হয়েছিলেন। তাঁর বংশের এক রাজার নাম হস্তী, তিনি হস্তিনাপুর নগর স্থাপন করেন। হস্তীর চার পুরুষ পরে কুরু রাজা হন, তাঁর নাম অনুসারে কুরজাঙ্গল দেশ খ্যাত হয়। তিনি যেখানে তপস্যা করেছিলেন সেই স্থানই পবিত্র কুরুক্ষেত্র। কুরুর অধস্তন সপ্তম পুরুষের নাম প্রতীপ, তাঁর পুত্র শান্তনু

 মহাভিষ নামে ইক্ষ্বাকুবংশীয় এক রাজা ছিলেন, তিনি বহু যজ্ঞ ক’রে স্বর্গে যান। একদিন তিনি দেবগণের সঙ্গে ব্রহ্মার কাছে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে নদীশ্রেষ্ঠা গঙ্গাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সহসা বায়ুর প্রভাবে গঙ্গার সূক্ষ্ম বসন অপসৃত হ’ল। দেবগণ অধোমুখ হয়ে রইলেন, কিন্তু মহাভিষ গঙ্গাকে অসংকোচে দেখতে লাগলেন। ব্রহ্মা তাঁকে শাপ দিলেন, তুমি মর্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ কর, পরে আবার স্বর্গে আসতে পারবে। মহাভিষ স্থির করলেন তিনি মহাতেজস্বী প্রতীপ রাজার পুত্র হবেন।

 গঙ্গা মহাভিষকে ভাবতে ভাবতে মর্ত্যে ফিরে আসছিলেন, পথিমধ্যে দেখলেন বসু নামক দেবগণ মূর্ছিত হয়ে প’ড়ে আছেন। গঙ্গার প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বললেন, বশিষ্ঠ আমাদের শাপ দিয়েছেন—তোমরা নরযোনিতে জন্মগ্রহণ কর। আমরা মানুষীর গর্ভে যেতে চাই না, আপনিই আমাদের পুত্ররূপে প্রসব করুন, প্রতীপের পুত্র শান্তনু আমাদের পিতা হবেন। জন্মের পরেই আপনি আমাদের জলে ফেলে দেবেন, যাতে আমরা শীঘ্র নিষ্কৃতি পাই। গঙ্গা বললেন তাই করব,

  1. দুষ্মন্ত নিজের কটূক্তির জন্য ক্ষমা চাইলেন না।