পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬২৩

রেখে শয়ন করবে। ক্ষেত্রে বা গ্রামের নিকটে মলত্যাগ করবে না। ভোজনের পর কিঞ্চিৎ খাদ্য অবশিষ্ট রাখবে। আর্দ্রচরণে ভোজন করবে, কিন্তু শয়ন করবে না। বৃদ্ধকে অভিবাদন করবে এবং স্বয়ং আসন দেবে। বিবস্ত্র হয়ে স্নান বা শয়ন করবে না। উচ্ছিষ্ট হয়ে (এঁটো মুখে) অধ্যয়ন বা অধ্যাপনা করবে না। গুরুর সঙ্গে বিতণ্ডা বা গুরুনিন্দা করবে না। সৎকূলজাতা সুলক্ষণা বয়স্থা কন্যাকেই বিবাহ করা বিজ্ঞ লোকের উচিত। নিমন্ত্রিত না হয়ে কোথাও যাবে না। মাতা পিতা প্রভৃতি গুরুজনের আজ্ঞা পালন করবে, তাঁদের উপদেশ বিচার করবে না। বেদ অস্ত্রবিদ্যা অশ্ব-হস্তী-আরোহণ ও রথচালন শিক্ষা করবে। ঋতুর পঞ্চম দিনে গর্ভাধান হ’লে কন্যা এবং ষষ্ঠ দিনে পুত্র হয় এই বুঝে পত্নীর সহবাস করবে। যথাশক্তি যজ্ঞ দ্বারা দেবতাদের আরাধনা করবে। যুধিষ্ঠির, তুমি সদাচার সম্বন্ধে আর যা জানতে চাও তা বেদজ্ঞ বৃদ্ধদের জিজ্ঞাসা ক’রো। সদাচারই ঐশ্বর্য কীর্তি আয়ু ও ধর্মের মূল।

 তার পর ভীষ্ম ভ্রাতার কর্তব্য সম্বন্ধে এই উপদেশ দিলেন।—গুরু যেমন শিষ্যের প্রতি সেইরূপ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কনিষ্ঠের প্রতি ব্যবহার করবেন। শত্রুরা যাতে ভ্রাতাদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সতর্ক থাকবেন। তিনি পৈতৃক অংশ থেকে কনিষ্ঠগণকে বঞ্চিত করবেন না। কনিষ্ঠ যদি দুষ্কর্ম করে তবে তার যাতে মঙ্গল হয় এমন চেষ্টা করবেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সৎ বা অসৎ যাই হ’ন, কনিষ্ঠের তাঁকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। পিতার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাই পিতৃস্থানীয় হন, অতএব তাঁর আশ্রয়েই বাস করা কর্তব্য। জ্যেষ্ঠা ভগিনী ও জ্যেষ্ঠা ভ্রাতৃজায়া স্তন্যদায়িনী মাতার সমান।

১৭। মানসতীর্থ—বৃহস্পতির উপদেশ

 যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম উপবাসের গুণবর্ণনার পর তীর্থ সম্বন্ধে বললেন, পৃথিবীর সকল তীর্থই ফলপ্রদ, কিন্তু মানসতীর্থই পবিত্রতম। ধৈর্য তার হ্রদ, বিমল সত্য তার অগাধ জল; এই তীর্থে স্নান করলে অনর্থিত্ব ঋজুতা মৃদুতা অহিংসা অনিষ্ঠুরতা শান্তি ও ইন্দ্রিয়দমনশক্তি লাভ হয়। জল দিয়ে দেহ ধৌত করলেই স্নান হয় না, যিনি ইন্দ্রিয় দমন করেছেন তাঁকেই যথার্থ স্নাত বলা যায়, তাঁর বাহ্য ও অভ্যন্তর শুচি হয়। মানসতীর্থে ব্রহ্মজ্ঞান রূপ সলিল দ্বারা স্নানই তত্ত্বদর্শীদের মতে শ্রেষ্ঠ।

 যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করলেন, মানুষ কি জন্য বার বার জন্মগ্রহণ করে, কিরূপ