পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২৪
মহাভারত

কার্যের ফলে স্বর্গে বা নরকে যায়? ভীষ্ম বললেন, ওই ভগবান বৃহস্পতি আসছেন, ইনিই তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। বৃহস্পতি উপস্থিত হয়ে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্ন শুনে বললেন, মহারাজ, মানুষ একাকীই জন্মায়, মরে, দুর্গতি থেকে উদ্ধার পায়, এবং দুর্গতি ভোগ করে; পিতা মাতা আত্মীয় বন্ধু কেউ তার সহায় নয়। আত্মীয়স্বজন ক্ষণকাল রোদন ক’রে মৃতব্যক্তির দেহ কাষ্ঠ-লোষ্ট্রের ন্যায় ত্যাগ ক’রে চ’লে যায়, কেবল ধর্মই অনুগমন করেন। মৃত্যুর পর জীব অন্য দেহ গ্রহণ করে, পঞ্চভূতস্থ দেবতারা তার শুভাশভ কর্মসকল দর্শন করেন। মানুষ যে অন্ন ভোজন করে তাতে পঞ্চভূত পরিতৃপ্ত হ’লে রেতঃ উৎপন্ন হয়, জীব তা আশ্রয় করে স্ত্রীগর্ভে প্রবিষ্ট হয় এবং যথাকালে প্রসূত হয়ে সংসারচক্রে ক্লেশ ভোগ করে। যে ব্যক্তি জন্মাবধি যথাশক্তি ধর্মাচরণ করে সে নিত্য সুখী হয়; যে অধার্মিক সে যমালয়ে যায় এবং তির্যগ্‌যোনি লাভ করে; যে ধর্ম ও অধর্ম দুইপ্রকার আচরণ করে সে সখের পর দুঃখ ভোগ করে। যে ব্যক্তি মোহবশে অধর্ম ক’রে পরে অনুতপ্ত হয় তাকে দুষ্কৃতের ফল ভোগ করতে হয় না। যার মনে যত অনুতাপ হয় তার তত পাপক্ষয় হয়। ধর্মজ্ঞ ব্রাহ্মণের নিকট নিজের কর্ম ব্যক্ত করলে অধর্মর্জনিত অপবাদ শীঘ্র দূর হয়। অহিংসাই ধর্ম সাধনের শ্রেষ্ঠ উপায়। যিনি সকল প্রাণীকে নিজের তুল্য জ্ঞান করেন, যিনি ক্রোধ ও আঘাতের প্রবৃত্তি জয় করেছেন, তিনি পরলোকে সুখলাভ করেন।

১৮। মাংসাহার

 বৃহস্পতি চ’লে গেলে যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি বহু বার বলেছেন যে অহিংসা পরম ধর্ম; আপনার কাছে এও শুনেছি যে পিতৃগণ আমিষ ইচ্ছা করেন সেজন্য শ্রাদ্ধে বহুবিধ মাংস দেওয়া হয়। হিংসা না করলে মাংস কোথায় পাওয়া যাবে? ভীষ্ম বললেন, যাঁরা সৌন্দর্য স্বাস্থ্য আয়ু বুদ্ধি বল ও স্মরণশক্তি চান তাঁরা হিংসা ত্যাগ করেন। স্বায়ম্ভুব মনু বলেছেন, যিনি মাংসাহার ও পশুহত্যা করেন না তিনি সর্ব জীবের মিত্র ও বিশ্বাসের পাত্র। নারদ বলেছেন, যে পরের মাংস দ্বারা নিজের মাংস বৃদ্ধি করতে চায় সে কষ্ট ভোগ করে। মাংসাশী লোক যদি মাংসাহার ত্যাগ করে তবে যে ফল পায়, বেদাধ্যয়ন ও সকল যজ্ঞের অনুষ্ঠান ক’রেও সেরূপ ফল পেতে পারে না। মাংসভোজনে আসক্তি জন্মালে তা ত্যাগ করা কঠিন; মাংসবর্জন-ব্রত আচরণ করলে সকল প্রাণী অভয় লাভ