পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অননুশাসনপর্ব
৬২৫

করে। যদি মাংসভোজী না থাকে তবে কেউ পশুহনন করে না. মাংসখাদকের জন্যই পশুঘাতক হয়েছে। মনু বলেছেন, যজ্ঞাদি কর্মে এবং শ্রাদ্ধে পিতৃগণের উদ্দেশে যে মন্ত্রপূত সংস্কৃত মাংস নিবেদিত হয় তা পবিত্র হবি স্বরূপ, তা ভিন্ন অন্য মাংস বৃথা মাংস এবং অভক্ষ্য।

 যুধিষ্ঠির বললেন, মাংসাশী লোকে পিষ্টক শাক প্রভৃতি স্বাদু খাদ্য অপেক্ষা মাংসই ইচ্ছা করে; আমিও মনে করি মাংসের তুল্য সরস খাদ্য কিছুই নেই। অতএব আপনি মাংসাহার ও মাংসবর্জনের দোষগুণ বলুন। ভীষ্ম বললেন, তোমার কথা সত্য, মাংস অপেক্ষা স্বাদু কিছু নেই। কৃশ দুর্বল ইন্দ্রিয়সেবী ও পথশ্রান্ত লোকের পক্ষে মাংসই শ্রেষ্ঠ খাদ্য, তাতে সদ্য বলবৃদ্ধি ও পুষ্টি হয়। কিন্তু যে লোক পরমাংস দ্বারা নিজ মাংস বৃদ্ধি করতে চায় তার অপেক্ষা ক্ষুদ্র ও নৃশংসতর কেউ নেই। বেদে আছে, পশুগণ যজ্ঞের নিমিত্ত সৃষ্ট হয়েছে, অতএব যজ্ঞ ভিন্ন অন্য কারণে পশুহত্যা রাক্ষসের কার্য। পুরাকালে অগস্ত্য অরণ্যের পশুগণকে দেবতাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলেন, সেজন্য ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মৃগয়া প্রশংসনীয়। লোকে মরণ পণ ক’রে মগয়ায় প্রবৃত্ত হয়, হয় পশু মরে নতুবা মৃগয়াকারী মরে; দুইএরই সমান বিপদের সম্ভাবনা, এজন্য মৃগয়ায় দোষ হয় না। কিন্তু সর্বভূতে দয়ার তুল্য ধর্ম নেই, দয়ালু তপস্বীদের ইহলোকে ও পরলোকে জয় হয়। প্রাণদানই শ্রেষ্ঠ দান; আত্মা অপেক্ষা প্রিয়তর কিছু নেই, অতএব আত্মবান মানবের সকল প্রাণীকেই দয়া করা উচিত। যারা পশুমাংস খায়, পরজন্মে তারা সেই পশু কর্তৃক ভক্ষিত হয়। আমাকে (মাং) সে (সঃ) পূর্বজন্মে খেয়েছে, অতএব আমি তাকে খাব—‘মাংস’ শব্দের এই তাৎপর্য।

১৯। ব্রাহ্মণ-রাক্ষস-সংবাদ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, সাম (তোষণ) ও দান এই দুইএর মধ্যে কোন্ উপায় শ্রেষ্ঠ? ভীষ্ম বললেন, কেউ সাম দ্বারা কেউ দান দ্বারা প্রসাদিত হয়, লোকের প্রকৃতি বুঝে সাম বা দান অবলম্বন করতে হয়। সাম দ্বারা দুরন্ত প্রাণীকেও বশ করা যায়। একটি উপাখ্যান বলছি শোন।—এক সুবক্তা ব্রাহ্মণ জনহীন বনে এক ক্ষুধার্ত রাক্ষসের সম্মুখীন হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ হতবুদ্ধি ও ত্রস্ত না হয়ে রাক্ষসকে মিষ্টবাক্যে সম্বোধন করলেন। রাক্ষস বললে, তুমি যদি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পার তবে তোমাকে ছেড়ে দেব; আমি কিজন্য পাণ্ডুবর্ণ ও কৃশ হয়ে