পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২৬
মহাভারত

যাচ্ছি তা বল। ব্রাহ্মণ কিছুক্ষণ চিন্তা ক’রে বললেন, রাক্ষস, তুমি বিদেশে বন্ধুহীন হয়ে বিষয় ভোগ করছ এজন্য পাণ্ডুবর্ণ ও কৃশ হচ্ছ। তোমার মিত্রগণ তোমার নিকট সদ্‌ব্যবহার পেয়েও তোমার প্রতি বিমুখ হয়েছে। তোমার চেয়ে নিকৃষ্ট লোকেও ধনবান হয়ে তোমাকে অবজ্ঞা করছে। তুমি যাদের উপকার করেছিলে তারা এখন তোমাকে গ্রাহ্য করে না। তুমি গুণবান বিনয়সম্পন্ন ও প্রাজ্ঞ, কিন্তু দেখছ যে গুণহীন অজ্ঞ লোকে সম্মানিত হচ্ছে। কোনও শত্রু মিত্ররূপে এসে তোমাকে বঞ্চনা করেছে। নিজের গুণ প্রকাশ ক’রেও তুমি অসৎ লোকের কাছে মর্যাদা পাও নি। তোমার ধন বৃদ্ধি ও শাস্ত্রজ্ঞান নেই, কেবল তেজস্বিতার প্রভাবে তুমি মহান হ’তে চাচ্ছ। তুমি বনবাসী হয়ে তপস্যা করতে ইচ্ছা কর, কিন্তু তোমার বান্ধবদের তাতে সম্মতি নেই। এক ধনী সুরূপ যুবা তোমার প্রতিবেশী, সে তোমার প্রিয়া পত্নীকে কামনা করে। তুমি লজ্জার বশে নিজের অভিপ্রায় প্রকাশ করতে পার না। কোনও চিরাভিলষিত ফল তুমি লাভ করতে পার নি। অপরাধ না ক’রেও তুমি অকারণে অন্যের অভিশাপ পেয়েছ। পাপীদের উন্নতি এবং সাধুদের দুর্দশা দেখে তোমার দুঃখ হয়। সুহৃদ্‌গণের অনুরোধে তুমি পরস্পরবিরোধী লোকদের তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছ। শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণের কুকর্ম এবং জ্ঞানী লোকের ইন্দ্রিয়সংযমের অভাব দেখে তুমি ক্ষুব্ধ হয়েছ। রাক্ষস, এইসকল কারণে তুমি পাণ্ডুবর্ণ ও কৃশ হয়ে যাচ্ছ।

 ব্রাহ্মণের কথা শুনে রাক্ষস তুষ্ট হ’ল এবং তাঁকে বহু অর্থ দিয়ে ছেড়ে দিলে।

২০। ত্রিবিধ প্রমাণ—ভীষ্মোপদেশের সমাপ্তি

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, প্রত্যক্ষ ও আগম (শ্রুতি) এই দুই প্রমাণের কোন্‌টি শ্রেষ্ঠ? ভীষ্ম বললেন, পণ্ডিতাভিমানী হেতুবাদীরা প্রত্যক্ষ ভিন্ন অন্য প্রমাণ মানে না; তাদের এই সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। আগমই প্রধান প্রমাণ, কিন্তু অনলস ও অভিনিবিষ্ট না হ’লে তা স্থির করা দুঃসাধ্য। যারা শিষ্টাচারহীন, বেদ ও ধর্মের বিদ্বেষী, তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যাঁরা সাধু, শাস্ত্রচর্চায় যাঁদের বুদ্ধি বিশুদ্ধ হয়েছে, তাঁদের কাছেই সংশয়ভঞ্জনের জন্য যাওয়া উচিত। বেদ, প্রত্যক্ষ ও শিষ্টাচার— এই তিনটিই প্রমাণ। যুধিষ্ঠির বললেন, তবে ধর্মও কি তিনপ্রকার? ভীষ্ম বললেন, ধর্ম একই, তার প্রমাণ তিনপ্রকার হ’তে পারে। তর্কদ্বারা