পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬২৭

ধর্ম জানতে চেষ্টা ক’রো না, প্রমাণের যে নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে তার দ্বারাই নিজের সংশয় দূর করতে পারবে। অহিংসা সত্য অক্রোধ ও দান—এই চারটিই সনাতন ধর্ম, তুমি এই ধর্মের অনুষ্ঠান করবে। পিতৃপিতামহের অনুসরণ ক’রে ব্রাহমণদের সেবা কর, তাঁরাই তোমাকে ধর্মের উপদেশ দেবেন।


 ভীষ্ম এইরূপে যুধিষ্ঠিরকে নানাবিষয়ক উপদেশ দিয়ে নীরব হলেন। যে ক্ষত্রবীরগণ তাঁর নিকটে সমবেত হয়েছিলেন তাঁরা ক্ষণকাল চিত্রার্পিতের ন্যায় নিশ্চল হয়ে রইলেন। তার পর মহর্ষি ব্যাস শরশয্যাশায়ী ভীষ্মকে বললেন, গঙ্গানন্দন, কুরুরাজ যুধিষ্ঠির এখন প্রকৃতিস্থ হয়েছেন; তুমি অনুমতি দাও, তিনি তাঁর ভ্রাতৃগণ, কৃষ্ণ ও উপস্থিত রাজগণের সঙ্গে হস্তিনাপুরে ফিরে যাবেন। ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে মধুরবাক্যে বললেন, মহারাজ, তুমি এখন অমাত্যগণের সঙ্গে নগরে যাও, তোমার মনস্তাপ দূর হ’ক। তুমি শ্রদ্ধাসহকারে যযাতির ন্যায় বহু যজ্ঞ ক’রে প্রচুর দক্ষিণা দাও, দেবগণ ও পিতৃগণকে তৃপ্ত কর, প্রজাগণের মনোরঞ্জন এবং সুহৃদ্‌গণের সম্মান কর। পক্ষীরা যেমন ফলবান বৃক্ষ আশ্রয় করে, তোমার সুহৃদ্‌গণ সেইরূপ তোমাকে আশ্রয় করুন। সূর্যের উত্তরায়ণ আরম্ভ হ’লে আমার মৃত্যুকাল উপস্থিত হবে, তখন তুমি আবার এসো। যুধিষ্ঠির সম্মত হলেন এবং ভীষ্মকে অভিবাদনের পর ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীকে অগ্রবর্তী ক’রে সকলের সঙ্গে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন।

২১। ভীষ্মের স্বর্গারোহণ

 যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরে এসে পুরবাসী ও জনপদবাসীদের যথোচিত সম্মান ক’রে গৃহগমনের অনুমতি দিলেন এবং পতিপুত্রহীনা নারীদের প্রচুর অর্থ দিয়ে সান্ত্বনা করলেন। পঞ্চাশ দিন পরে তিনি স্মরণ করলেন যে ভীষ্মের কাছে তাঁর যাবার সময় উপস্থিত হয়েছে। তখন তিনি অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জন্য ঘৃত মাল্য ক্ষৌমবস্ত্র চন্দন অগুরু প্রভৃতি এবং বিবিধ মহার্ঘ রত্ন পাঠিয়ে দিলেন এবং ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী ও ভ্রাতৃগণকে অগ্রবর্তী করে যাজকগণের সঙ্গে যাত্রা করলেন। কৃষ্ণ বিদুর যুযুৎসু ও সাত্যকি তাঁর অনুসরণ করলেন। তাঁরা কুরুক্ষেত্রে ভীষ্মের নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলেন, ব্যাসদেব নারদ ও অসিতদেবল