পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬২৯

ক’রে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, ব্রাহ্মণগণ—বিশেষত আচার্য ও ঋত্বিগ্‌গণ, তোমার পূজনীয়।

 শান্তনুপুত্র ভীষ্ম সমবেত কুরগণকে এইরূপ বলে নীরব হলেন, তার পর যথাক্রমে মূলাধারাদিতে তাঁর চিত্ত নিবেশিত করলেন। তাঁর প্রাণবায়ু নিরুদ্ধ হয়ে যেমন ঊর্ধ্বগামী হ’তে লাগল সেই সঙ্গে তাঁর শরীর ক্রমশ বাণমুক্ত ও ব্যথাহীন হ’ল। তার পর তাঁর প্রাণ ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ ক’রে মহা উল্কার ন্যায় আকাশে উঠে অন্তর্হিত হ’ল। পুষ্পবৃষ্টি ও দেবদুন্দুভির ধ্বনি হতে লাগল, সিদ্ধ ও মহর্ষিগণ সাধু সাধু বলতে লাগলেন। ভীষ্ম এইরূপে স্বর্গারোহণ করলে পাণ্ডবগণ বিদুর ও যুযুৎসু চিতা রচনা করলেন, যুধিষ্ঠির ও বিদুর তাঁকে ক্ষৌম বস্ত্র পরিয়ে দিলেন, যুযুৎসু তাঁর উপরে ছত্র ধারণ করলেন, ভীমার্জুন শুভ্র চামর বীজন করতে লাগলেন, নকুল-সহদেব উষ্ণীষ পরিয়ে দিলেন, ধৃতরাষ্ট্র ও যুধিষ্ঠির তাঁর পাদদেশে রইলেন। কৌরবনারীগণ ভীষ্মের আপাদমস্তক তালপত্র (পাখা) দিয়ে বীজন করতে লাগলেন। হোম ও সামগানের পর ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতি ভীষ্মের দেহ চন্দনকাষ্ঠ অগুরু প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ক’রে অগ্নিদান করলেন। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া শেষ হ’লে সকলে ভাগীরথীতীরে গিয়ে যথাবিধি তর্পণ করলেন।

 সেই সময়ে দেবী ভাগীরথী জল থেকে উঠে সরোদনে বললেন, কৌরবগণ, আমার পুত্র রাজোচিত গুণসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান ও মহাকুলজাত ছিলেন; পরশুরামের নিকট যিনি পরাজিত হন নি, তিনি শিখণ্ডীর দিব্য অস্ত্রে নিহত হয়েছেন। আমার হৃদয় লৌহময়, তাই প্রিয়পুত্রের মরণে বিদীর্ণ হয় নি। ভাগীরথীর এইরূপ বিলাপ শুনে কৃষ্ণ বললেন, দেবী, শোক ত্যাগ কর, তোমার পুত্র পরমলোকে গেছেন। শিখণ্ডী তাঁকে বধ করেন নি, তিনি ক্ষত্রধর্মানসারে যুদ্ধ করে অর্জুন কর্তৃক নিহত হয়ে বসুলোকে গেছেন।