পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আশ্বমেধিকপর্ব

॥ আশ্বমেধিকপর্বাধ্যায়॥

১। যুধিষ্ঠিরের পুনর্বার মনস্তাপ

 ভীষ্মের উদ্দেশে তর্পণের পর ধৃতরাষ্ট্রকে অগ্রবর্তী ক’রে যুধিষ্ঠির গঙ্গার তীরে উঠলেন এবং ব্যাকুল হয়ে অশ্রুপূর্ণনয়নে ভূপতিত হলেন। ভীম তাঁকে তুলে ধরলে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, এমন করবেন না। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পুরুষশ্রেষ্ঠ, ওঠ, তোমার কর্তব্য পালন কর; তুমি ক্ষত্রধর্মানুসারে পৃথিবী জয় করেছ, এখন ভ্রাতা ও সুহৃদ্‌বর্গের সঙ্গে ভোগ কর। তোমার শোকের কারণ নেই, গান্ধারী ও আমারই শোক করা উচিত, আমাদের শতপুত্র স্বপ্নলব্ধ ধনের ন্যায় বিনষ্ট হয়েছে। দিব্যদর্শী বিদুর আমাকে বলেছিলেন—মহারাজ, দুর্যোধনের অপরাধে আপনার কুলক্ষয় হবে: তাকে ত্যাগ করুন, কর্ণ আর শকুনির সঙ্গে তাকে মিশতে দেবেন না, ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যে অভিষিক্ত করুন; আর তা যদি ইচ্ছা না করেন তবে স্বয়ং রাজ্যভার গ্রহণ করুন। দীর্ঘদর্শী বিদুরের এই উপদেশ আমি শুনি নি সেজন্যই শোকসাগরে নিমগ্ন হয়েছি। এখন তুমি এই দুঃখার্ত বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি দৃষ্টিপাত কর।

 যুধিষ্ঠির নীরব হয়ে আছেন দেখে কৃষ্ণ তাঁকে বললেন, মহারাজ, অত্যন্ত শোক করলে পরলোকগত আত্মীয়গণ সন্তপ্ত হন। আপনি এখন প্রকৃতিস্থ হয়ে বিবিধ যজ্ঞ করুন, দেবগণ ও পিতৃগণকে তৃপ্ত করুন, অন্নাদি দান ক’রে অতিথি ও দরিদ্রগণকে তুষ্ট করুন। যাঁরা যুদ্ধে মরেছেন তাঁদের আর আপনি দেখতে পাবেন না, অতএব শোক করা বৃথা। যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, গোবিন্দ, আমার উপর তোমার প্রীতি ও অনুকম্পা আছে তা জানি; তুমি সন্তুষ্টচিত্তে আমাকে বনগমনের অনুমতি দাও, পিতামহ ভীষ্ম ও পুরুষশ্রেষ্ঠ কর্ণের মৃত্যুর জন্য আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।

 ব্যাসদেব বললেন, বৎস, তোমার বুদ্ধি পরিপক্ক নয়, তাই বালকের ন্যায় মোহগ্রস্ত হচ্ছ, আমরা বার বার বৃথাই তোমাকে প্রবোধ দিয়েছি। তুমি ক্ষত্রিয়ের