পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিক পৰ্ব
৬৩১

ধর্ম জান, মোক্ষধর্ম রাজধর্ম দানধর্ম এবং প্রায়শ্চিত্ত সম্বন্ধে উপদেশও সবিস্তারে শুনেছ; তথাপি তোমার সংশয় দূর হয় নি, তাতে মনে হয় আমাদের উপদেশে তোমার শ্রদ্ধা নেই, তোমার স্মরণশক্তিও নেই। সর্বধর্মের তত্ত্ব জেনেও কেন তুমি অজ্ঞের ন্যায় মোহগ্রস্ত হচ্ছ? যদি নিজেকে পাপী মনে কর তবে আমি পাপনাশের উপায় বলছি শোন। তপস্যা যজ্ঞ ও দান করলে পাপমুক্ত হওয়া যায়, অতএব তুমি দশরথপুত্র রাম এবং তোমার পূর্ব পুরুষ দুষ্মন্ত-শকুন্তলার পুত্র ভরতের ন্যায় অশ্বমেধ যজ্ঞ ক’রে প্রচুর দান কর।

 যুধিষ্ঠির বললেন, দ্বিজোত্তম, অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে রাজারা নিশ্চয় পাপমুক্ত হন; কিন্তু আমার এমন বিত্ত নেই যা দান ক’রে জ্ঞাতিবধের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি। এখন যে অল্পবয়স্ক নির্ধন রাজারা আছেন তাঁদের কাছেও আমি কিছু চাইতে পারব না। ব্যাসদেব ক্ষণকাল চিন্তা ক’রে বললেন, কুন্তীপুত্র, তোমার শূন্য কোষ আবার পূর্ণ হবে। মরুত্ত রাজা তাঁর যজ্ঞে যে বিপুল ধন ব্রাহ্মণদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলেন তা হিমালয় পর্বতে রয়েছে; সেই ধন নিয়ে এস। যুধিষ্ঠির বললেন, মরুত্ত রাজার যজ্ঞে কি ক’রে ধন সঞ্চিত হয়েছিল? তিনি কোন্ সময়ে বর্তমান ছিলেন?

২। মরুত্ত ও সংবর্ত

 ব্যাসদেব বললেন, সত্যযুগে মনু দণ্ডধর রাজা ছিলেন, তাঁর প্রপৌত্র ইক্ষাকু। ইক্ষাকুর শত পুত্র হয়েছিল, সকলকেই তিনি রাজপদে অভিষিক্ত করেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র বিংশের পৌত্র খনীনেত্র সকলকে উৎপীড়িত করতেন সেজন্য প্রজারা তাঁকে অপসারিত ক’রে তাঁর পুত্র সুবর্চাকে রাজা করেছিল। সুবর্চা পরম ধার্মিক ও প্রজারঞ্জক ছিলেন, কিন্তু কালক্রমে তাঁর কোষ ও অশ্বগজাদি ক্ষয় পাওয়ায় সামন্তরাজগণ তাঁকে নির্যাতিত করতে লাগলেন। তখন তিনি তাঁর হস্তে ফুৎকার দিয়ে সৈন্যদল সৃষ্টি ক’রে বিপক্ষ রাজগণকে পরাস্ত করলেন। এই কারণে তিনি করন্ধম[১] নামে খ্যাত হন। ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে তাঁর অবিক্ষিৎ নামে একটি সর্বগুণান্বিত পুত্র হয়েছিল। অবিক্ষিতের পুত্র মহাবলশালী দ্বিতীয় বিষ্ণু স্বরূপ রাজচক্রবর্তী মরুত্ত। ধর্মাত্মা মরুত্ত হিমালয়ের উত্তরস্থ মেরু পর্বতে এক

  1. যিনি হাতে ফুঁ দেন।