পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৩৯

কিন্তু যেন একটি পুত্র জীবিত থাকে, নতুবা শান্তনুর সঙ্গে আমার সংগম ব্যর্থ হবে। বসুগণ বললেন, আমরা প্রত্যেকে নিজ বীর্যের অষ্টমাংশ দেব, তার ফলে একটি পুত্র জীবিত থাকবে। এই পুত্র বলবান হবে কিন্তু তার সন্তান হবে না।

 রাজা প্রতীপ গঙ্গাতীরে ব’সে জপ করছিলেন এমন সময় মনোহর নারীরূপ ধারণ করে গঙ্গা জল থেকে উঠে প্রতীপের দক্ষিণ ঊরুতে বসলেন। রাজা বললেন, কল্যাণী, কি চাও? গঙ্গা বললেন, কুরুশ্রেষ্ঠ, আমি তোমাকে চাই। রাজা বললেন, পরস্ত্রী আর অসবর্ণা আমার অগম্যা। গঙ্গা বললেন, আমি দেবকন্যা, অগম্যা নই। রাজা বললেন, তুমি আমার বাম ঊরতে না ব’সে দক্ষিণ ঊরুতে বসেছ, যেখানে পুত্র কন্যা আর পুত্রবধূর স্থান। তুমি আমার পুত্রবধূ হয়ো। গঙ্গা বললেন, তাই হব, কিন্তু আমার কোনও কার্যে আপনার পুত্র আপত্তি করতে পারবেন না। প্রতীপ সম্মত হলেন।

 গঙ্গা অন্তর্হিত হ’লে প্রতীপ ও তাঁর পত্নী পুত্রলাভের জন্য তপস্যা করতে লাগলেন। রাজা মহাভিষ তাঁদের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করলেন, তাঁর নাম হ’ল শান্তনু। শান্তনু যৌবন লাভ করলে প্রতীপ তাঁকে বললেন, তোমার নিমিত্ত এক রূপবতী কন্যা পূর্বে আমার কাছে এসেছিল। সে যদি পুত্রকামনায় তোমার কাছে উপস্থিত হয়, তবে তার ইচ্ছা পূর্ণ ক’রো, কিন্তু তার পরিচয় জানতে চেয়ো না, তার কার্যেও বাধা দিও না। তার পর প্রতীপ তাঁর পুত্র শান্তনকে রাজ্যে অভিষিক্ত ক’রে বনে প্রস্থান করলেন।

 একদিন শান্তনু গঙ্গার তীরে এক দিব্যাভরণভূষিতা পরমা সুন্দরী নারীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন, তুমি দেবী দানবী অপ্সরা না মানুষী? তুমি আমার ভার্যা হও। গঙ্গা উত্তর দিলেন, রাজা, আমি তোমার মহিষী হব, কিন্তু আমি শুভ বা অশভ যাই করি তুমি যদি বারণ বা ভর্ৎসনা কর তবে তোমাকে নিশ্চয় ত্যাগ করব। শান্তনু তাতেই সম্মত হলেন।

 ভার্যার স্বভাবচরিত্র রূপগুণ ও সেবায় পরিতৃপ্ত হয়ে শান্তনু সুখে কালযাপন করতে লাগলেন। তাঁর আটটি দেবকুমার তুল্য পুত্র হয়েছিল। প্রত্যেক পুত্রের জন্মের পরেই গঙ্গা তাকে জলে নিক্ষেপ ক’রে বলতেন, এই তোমার প্রিয়কার্য করলাম। শান্তনু অসন্তুষ্ট হ’লেও কিছু বলতেন না, পাছে গঙ্গা তাঁকে ছেড়ে চলে যান। অষ্টম পুত্র প্রসবের পর গঙ্গা হাসছেন দেখে শান্তনু বললেন, একে মেরো না, পুত্রঘাতিনী, তুমি কে, কেন এই মহাপাপ করছ? গঙ্গা বললেন, তুমি