পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৩৩

আপনি আমার গুরুপত্র, আমি আপনার পরম ভক্ত; দেবর্ষি নারদ আপনার সন্ধান দিয়েছেন। সংবর্ত বললেন, নারদ জানেন যে আমি যাজ্ঞিক; তিনি এখন কোথায়? মরুত্ত বললেন, তিনি অগ্নিপ্রবেশ করেছেন। সংবর্ত তুষ্ট হয়ে বললেন, আমি তোমার যজ্ঞ করতে পারি। তার পর তিনি কঠোর বাক্যে ভর্ৎসনা ক’রে বললেন, আমি বায়ুরোগগ্রস্ত বিকৃতবেশধারী অস্থিরমতি; আমাকে দিয়ে যজ্ঞ করাতে চাও কেন? আমার অগ্রজ বৃহস্পতির কাছে যাও, তিনি আমার সমস্ত যজমান দেবতা ও গৃহস্থিত সামগ্রী নিয়েছেন, এখন আমার শরীর ভিন্ন নিজের কিছু নেই। তিনি আমার পূজনীয়, তাঁর অনুমতি বিনা আমি তোমার যজ্ঞ করতে পারব না।

 মরুত্ত জানালেন যে বৃহস্পতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তখন সংবর্ত বললেন, আমি তোমার যজ্ঞ সম্পাদন করব, কিন্তু তাতে ইন্দ্র ও বৃহস্পতি তোমার উপর ক্রুদ্ধ হবেন। তুমি প্রতিজ্ঞা কর যে আমাকে পরিত্যাগ করবে না। মরুত্ত শপথ করলে সংবর্ত বললেন, হিমালয়ের পৃষ্ঠে মুঞ্জবান নামে একটি পর্বত আছে, শূলপাণি মহেশ্বর উমার সহিত সেখানে বিহার করেন; রুদ্র সাধ্য প্রভৃতি গণদেব এবং ভূত পিশাচ গন্ধর্ব যক্ষ রাক্ষসাদি তাঁকে উপাসনা করেন। সেই পর্বতের চতুষ্পার্শ্বে সূর্যরশ্মির ন্যায় দীপ্যমান সুবর্ণের আকর আছে। তুমি সেখানে গিয়ে মহাদেবের শরণাপন্ন হও, তিনি প্রসন্ন হ’লে তুমি সেই সুবর্ণ লাভ করবে।

 সংবর্তের উপদেশ অনুসারে মরুত্ত মুঞ্জবান পর্বতে গেলেন এবং মহাদেবকে তুষ্ট ক’রে সেই সুবর্ণরাশি নিয়ে যজ্ঞের আয়োজন করতে লাগলেন। তাঁর আদেশে শিল্পিগণ বহু সুবর্ণময় আধার নির্মাণ করলে। মরুত্তের সমৃদ্ধির সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতি সন্তপ্ত হলেন, তাঁর শরীর কৃশ ও বিবর্ণ হ’তে লাগল। তিনি ইন্দ্রকে বললেন, যে উপায়ে হ’ক সংবর্ত ও মরুত্তকে দমন কর। ইন্দ্রের আদেশে বৃহস্পতিকে সঙ্গে নিয়ে অগ্নিদেব যজ্ঞস্থলে এসে মরুত্তকে বললেন, মহারাজ, ইন্দ্র তোমার প্রতি তুষ্ট হয়েছেন, তাঁর আদেশে আমি বৃহস্পতিকে এনেছি, ইনিই যজ্ঞ সম্পাদন ক’রে তোমাকে অমরত্ব দেবেন। মরুত্ত বললেন, সংবর্তই আমার যাজন করবেন; আমি কৃতাঞ্জলিপুটে নিবেদন করছি, বৃহস্পতি দেবরাজের পুরোহিত, আমার ন্যায় মানুষের যাজন করা তাঁর শোভা পায় না। অগ্নি মরুত্তকে প্রলোভিত করবার বহু চেষ্টা করলেন; তখন সংবর্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, অগ্নি, তুমি চ’লে যাও, আবার যদি বৃহস্পতিকে নিয়ে এখানে আস তবে তোমাকে ভস্ম করব।

 অগ্নি ফিরে এলে ইন্দ্র তাঁর কথা শুনে বললেন, তুমিই তো সকলকে দগ্ধ