পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৪
মহাভারত

কর, তোমাকে সংবর্ত কি ক’রে ভস্ম করবেন? তোমার কথা অশ্রদ্ধেয়। তার পর ইন্দ্র গন্ধর্বরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে মরুত্তের কাছে পাঠালেন। ধৃতরাষ্ট্র নিজের পরিচয় দিয়ে মরুত্তকে বললেন, মহারাজ, তুমি যদি বৃহস্পতিকে পরোহিত না কর তবে ইন্দ্র তোমাকে বজ্রপ্রহার করবেন; ওই শোন, তিনি আকাশে সিংহনাদ করছেন। সংবর্ত মরুত্তকে বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত থাক, আমি সংস্তম্ভনী বিদ্যা দ্বারা তোমার ভয় নিবারণ করব। এই ব’লে সংবর্ত মন্ত্রপাঠ ক’রে ইন্দ্রাদি দেবগণকে আহ্বান করলেন।

 অনন্তর ইন্দ্র প্রভৃতি যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন, মরুত্ত ও সংবর্ত তাঁদের যথোচিত সংবর্ধনা করলেন। মরুত্ত বললেন, দেবরাজ, আপনাকে নমস্কার করছি, আপনার আগমনে আমার জীবন সফল হ’ল। ইন্দ্র বললেন, মহারাজ, তোমার গুরু মহাতেজা সংবর্তকে আমি জানি, এঁর আহ্বানেই আমি ক্রোধ ত্যাগ ক’রে এখানে এসেছি। সংবর্ত বললেন, দেবরাজ, যদি প্রীত হয়ে থাকেন তবে আপনিই এই যজ্ঞের বিধান দিন এবং যজ্ঞভাগ নির্দেশ করুন। তখন ইন্দ্রের আদেশে দেবগণ অতি বিচিত্র ও সমৃদ্ধ যজ্ঞশালা নির্মাণ করলেন; মহাসমারোহে মরুত্তের যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হ’ল। ইন্দ্র বললেন, মরুত্ত, আমরা তোমার পূজায় তুষ্ট হয়েছি; এখন ব্রাহ্মণগণ অগ্নির জন্য লোহিতবর্ণ, বিশ্বদেবগণের জন্য বিবিধবর্ণ, এবং অন্যান্য দেবগণের জন্য উচ্ছিশ্ন (উৎ-শিশ্ন) নীলবর্ণ (কৃষ্ণবর্ণ) পবিত্র বৃষ বধ করুন। যজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে মরুত্ত ব্রাহ্মণগণকে রাশি রাশি সুবর্ণ দান করলেন। তার পর তিনি প্রভূত বিত্ত কোষমধ্যে রক্ষা ক’রে গুরুর আদেশে স্বভবনে ফিরে এলেন এবং সসাগরা পৃথিবী শাসন করতে লাগলেন।

 এই ইতিহাস শেষ করে ব্যাস বললেন, যুধিষ্ঠির, তুমি মরুত্তের সঞ্চিত সুবর্ণরাশি নিয়ে এসে যজ্ঞ ক’রে দেবগণকে তৃপ্ত কর।

৩। কামগীতা

 কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, সর্বপ্রকার কুটিলতাই মৃত্যুজনক এবং সরলতাই ব্রহ্মলাভের পন্থা;—জ্ঞাতব্য বিষয় শুধু এই, অন্য আলোচনা প্রলাপ মাত্র। মহারাজ, আপনার কার্য শেষ হয় নি, সকল শত্রুকেও আপনি জয় করেন নি, কারণ নিজের অভ্যন্তরস্থ অহংবুদ্ধি রূপ শত্রুকে আপনি জানতে পারছেন না। বোধ হয় দুঃখাদির দ্বারা আকৃষ্ট হওয়াই আপনার স্বভাব। আপনি যেসকল কষ্ট ভোগ করছেন তা স্মরণ না ক’রে নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করুন। এই যুদ্ধ একাকী