পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৩৫

করতে হয়, এতে অস্ত্র অনুচর বা বন্ধুর প্রয়োজন নেই। যদি নিজের মনকে জয় করতে না পারেন তবে আপনার অতি দুরবস্থা হবে। অতএব আপনি শোক ত্যাগ ক’রে পিতৃপিতামহের অনুবর্তী হয়ে রাজ্যশাসন করুন। আমি পুরাবিৎ পণ্ডিতগণের কথিত কামগীতা বলছি শুনুন।—

 কামনা বলেছেন, অনুপযুক্ত উপায়ে কেউ আমাকে বিনষ্ট করতে পারে না; যে অস্ত্র দ্বারা লোকে আমাকে জয় করতে চেষ্টা করে সেই অস্ত্রই আমার প্রভাবে বিফল হয়। যজ্ঞ দ্বারা যে আমাকে জয় করতে চায় তার মনে আমি জঙ্গমস্থ ব্যক্ত জীবাত্মা রূপে প্রকাশ পাই। বেদ-বেদাঙ্গ সাধন ক’রে যে আমাকে জয় করতে চায় তার মনে স্থাবরস্থ অব্যক্ত জীবাত্মা রূপে আমি অধিষ্ঠান করি। ধৈর্য দ্বারা যে আমাকে পরাস্ত করতে চায় তার মনে আমি ভাব রূপে অবস্থান করি, সে আমার অস্তিত্ব জানতে পারে না। যে তপস্যা করে, তার মনে আমি তপ রূপেই থাকি। যে মোক্ষমার্গ অবলম্বন করে তাকে উদ্দেশ ক’রে আমি হাস্য ও নৃত্য করি। আমি সনাতন এবং সর্বপ্রাণীর অবধ্য।

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, আপনি শোক সংবরণ করুন, নিহত বন্ধুগণকে বার বার স্মরণ ক’রে বৃথা দুঃখভোগ করবেন না; কামনা ত্যাগ করে বিবিধদক্ষিণাযুক্ত অশ্বমেধ যজ্ঞ করুন, তার ফলে ইহলোকে কীর্তি এবং পরলোকে উত্তম গতি লাভ করবেন।

 কৃষ্ণ ব্যাস দেবস্থান নারদ প্রভৃতির উপদেশ শুনে যুধিষ্ঠিরের মন শান্ত হ’ল। তিনি বললেন, আমি মরুত্তের সুবর্ণ রাশি সংগ্রহ ক’রে অশ্বমেধ যজ্ঞ করব। আপনাদের বাক্যে আমি আশ্বাসিত হয়েছি, ভাগ্যহীন পুরুষ আপনাদের ন্যায় উপদেষ্টা লাভ করতে পারে না।


॥ অনুগীতাপর্বাধ্যায়॥

৪। অনুগীতা

 একদা এক রমণীয় স্থানে বিচরণ করতে করতে অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, কেশব, সংগ্রামের সময় আমি তোমার মাহাত্ম্য জেনেছিলাম, তোমার দিব্য রূপ ও ঐশ্বর্যও দেখেছিলাম। তুমি সুহৃদ্‌ভাবে আমাকে পূর্বে যে সকল উপদেশ দিয়েছিলে আমি বুদ্ধির দোষে তা ভুলে গেছি। তুমি শীঘ্রই দ্বারকায় ফিরে যাবে,