পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৮
মহাভারত

মুক্ত হয়ে মোক্ষলাভ করবে। ভরতশ্রেষ্ঠ, আমি বহু কাল আমার পিতাকে দেখি নি, এখন তাঁর কাছে যেতে ইচ্ছা করি। অর্জুন বললেন, কৃষ্ণ, এখন হস্তিনাপুরে চল, রাজা যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে তুমি দ্বারকায় যেয়ো।

৫। কৃষ্ণের দ্বারকাযাত্রা—মরুবাসী উতঙ্ক

 কৃষ্ণ দ্বারকায় যেতে চান শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, পুণ্ডরীকাক্ষ, তোমার মঙ্গল হ’ক; তুমি বহু দিন পিতামাতাকে দেখ নি, এখন তাঁদের কাছে যাওয়া তোমার কর্তব্য। দ্বারবতী পুরীতে গিয়ে তুমি আমার মাতুল বসুদেব, দেবী দেবকী, এবং বলদেবকে আমাদের অভিবাদন জানিও, আমাকে ও আমার ভ্রাতৃগণকে নিত্য স্মরণে রেখো, আমার অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় আবার এখানে এসো।

 ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, পিতৃষ্বসা কুন্তী ও বিদুর প্রভৃতির নিকট বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ তাঁর ভগিনী সুভদ্রার সঙ্গে রথারোহণে যাত্রা করলেন। বিদুর ভীমার্জুনাদি ও সাত্যকি তাঁর পশ্চাতে গেলেন। কিছু দূর গিয়ে তিনি বিদুর প্রভৃতিকে নিবর্তিত ক’রে দারুক ও সাত্যকিকে বললেন, বেগে রথ চালাও। কৃষ্ণ ও অর্জুন বহুক্ষণ পরস্পরের দিকে চেয়ে রইলেন, তার পর রথ দৃষ্টিপথের বাহিরে গেলে অর্জুনাদি হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন।

 কৃষ্ণের যাত্রাপথে বহু প্রকার শুভ লক্ষণ দেখা গেল। বায়ু সবেগে প্রবাহিত হয়ে রথের সম্মুখস্থ পথের ধূলি কঙ্কর ও কণ্টক দূর করলেন, ইন্দ্র সুগন্ধ বারি ও দিব্য পুষ্প বর্ষণ করতে লাগলেন। কিছু দূর যাবার পর কৃষ্ণ মরু প্রদেশে উপস্থিত হয়ে মুনিশ্রেষ্ঠ উতঙ্কের দর্শন পেলেন। পরস্পর অভিবাদন ও কুশলজিজ্ঞাসার পর উতঙ্ক বললেন, শৌরি, তোমার যত্নে কুরু পাণ্ডবদের মধ্যে সৌভ্রাত্র স্থাপিত হয়েছে তো? কৃষ্ণ বললেন, আমি সন্ধির জন্য বহু চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তা সফল হয় নি। বুদ্ধি বা বল দ্বারা দৈবকে অতিক্রম করা যায় না; ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ সবান্ধবে যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করেছেন, কেবল পঞ্চপাণ্ডব জীবিত আছেন, তাঁদেরও পুত্রমিত্র নিহত হয়েছেন। উতঙ্ক ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, কৃষ্ণ, তুমি সমর্থ হয়েও কুরুপুংগবগণকে রক্ষা কর নি, তোমার মিথ্যাচারের জন্যই কুরুকুল বিনষ্ট হয়েছে, আমি তোমাকে শাপ দেব। বাসুদেব বললেন, আমি অনুনয় করছি, শাপ দেবেন না। অল্প তপস্যার প্রভাবে আমাকে কেউ পরাভূত করতে পারেন না। আমি জানি যে