পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৩৯

আপনি কৌমার ও ব্রহ্মচর্য পালন ক’রে তপঃসিদ্ধ হয়েছেন, গুরুকেও তুষ্ট করেছেন; আপনার তপস্যা আমি নষ্ট করতে ইচ্ছা করি না।

 তার পর কৃষ্ণ তাঁর দিব্য ঐশ্বর্য সকল বিবৃত করলেন এবং উতঙ্কের অনুরোধে বিশ্বরূপ দেখালেন। উতঙ্ক বিস্ময়াপন্ন হয়ে বললেন, হে বিশ্বকর্মা বিশ্বাত্মা বিশ্বসম্ভব, তোমাকে নমস্কার করি, তুমি পদদ্বয় দ্বারা পৃথিবী, মস্তক দ্বারা গগন, জঠর দ্বারা দ্যুলোক-ভূলোকের মধ্যদেশ, এবং ভুজ দ্বারা দিকসমূহ ব্যাপ্ত ক’রে আছ; দেব, তোমার এই মহৎ রূপ সংবরণ ক’রে পূর্বরূপ ধারণ কর। কৃষ্ণ পূর্বরূপ গ্রহণ ক’রে প্রসন্ন হয়ে বললেন, মহর্ষি, আপনি অভীষ্ট বর প্রার্থনা করুন। উতঙ্ক বললেন, পুরুষোত্তম, তোমার যে রূপ দেখেছি তাই আমার পক্ষে পর্যাপ্ত বর। যদি নিতান্তই বর দেওয়া কর্তব্য মনে কর তবে এই বর দাও যেন এই মরুভূমিতে ইচ্ছানুসারে জল পেতে পারি। কৃষ্ণ বললেন, জলের প্রয়োজন হ’লেই আমাকে স্মরণ করবেন। এই ব’লে কৃষ্ণ প্রস্থান করলেন।

 কিছু কাল পরে একদিন উতঙ্ক মরুভূমিতে চলতে চলতে তৃষিত হয়ে কৃষ্ণকে স্মরণ করলেন। তখন এক দিগম্বর মলিনদেহ চণ্ডাল তাঁর কাছে উপস্থিত হ’ল, তার সঙ্গে কুকুরের দল, হাতে খড়্‌গ ও ধনুর্বাণ; তার অধোদেশে জলস্রোত (প্রস্রাব) প্রবাহিত হচ্ছে। চণ্ডাল সহাস্যে বললে, ভৃগুবংশজাত উতঙ্ক, তুমি আমার এই জল পান কর। উতঙ্ক পিপাসার্ত হয়েও সেই জল নিলেন না, ক্রুদ্ধ হয়ে তিরস্কার করলেন। চণ্ডাল অন্তর্হিত হ’ল। তার পর শঙ্খচক্রগদাধর কৃষ্ণকে দেখে উতঙ্ক বললেন, পুরুষশ্রেষ্ঠ, ব্রাহ্মণকে চণ্ডালের প্রস্রাব দেওয়া তোমার উচিত নয়। কৃষ্ণ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আপনাকে অমৃত দেবার জন্য আমি ইন্দ্রকে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, মানুষকে অমরত্ব দেওয়া অকর্তব্য; যদি উতঙ্ককে অমৃত দিতেই হয় তবে আমি চণ্ডালের রূপে দিতে যাব, যদি তিনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেন তবে অমৃত পাবেন না। মহর্ষি, আপনি চণ্ডালরূপী ইন্দ্রকে ফিরিয়ে দিয়ে অন্যায় করেছেন। যাই হ’ক, আমি বর দিচ্ছি, আপনার পিপাসা পেলেই মেঘ উদিত হয়ে এই মরুভূমিতে জলবর্ষণ করবে, সেই মেঘ উতঙ্কমেঘ নামে খ্যাত হবে। বর পেয়ে উতঙ্ক প্রীত হয়ে সেখানে বাস করতে লাগলেন। এখনও উতঙ্কমেঘ সেই মরুভূমিতে জলবর্ষণ করে।