পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪০
মহাভারত

৬। উতঙ্কের পূর্ববৃত্তান্ত

 জনমেজয় প্রশ্ন করলেন, উতঙ্ক এমন কি তপস্যা করেছিলেন যে তিনি জগৎপ্রভু বিষ্ণুকে শাপ দিতে উদ্যত হয়েছিলেন? বৈশম্পায়ন বললেন, উতঙ্ক[১] অতিশয় গুরুভক্ত ও তপোনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর গুরু গৌতমও তাঁকে অন্যান্য শিষ্য অপেক্ষা অধিক স্নেহ করতেন। একদিন উতঙ্ক কাষ্ঠভার এনে ভূমিতে ফেলবার সময় দেখলেন, রৌপ্যের ন্যায় তাঁর একগাছি জটা কাষ্ঠে লগ্ন হয়ে আছে। পরিশ্রান্ত ক্ষুধাতুর উতঙ্ক তাঁর বার্ধক্যের এই লক্ষণ দেখে কাঁদতে লাগলেন। গৌতমের কন্যা দ্রুতবেগে এসে উতঙ্কের অশ্রু অঞ্জলিতে ধারণ করলেন, তাতে তাঁর হস্ত দগ্ধ হ’ল। গৌতম জিজ্ঞাসা করলেন, বৎস, তুমি শোকার্ত হ’লে কেন? উতঙ্ক বললেন, আমি শতবর্ষ আপনার প্রিয়সাধন করেছি; এতদিন আমার বার্ধক্য জানতে পারি নি, সুখভোগও করি নি। আমার চেয়ে যারা ছোট এমন শত সহস্র শিষ্য কৃতকার্য হয়ে আপনার আদেশে গৃহে ফিরে গেছে। গৌতম বললেন, তোমার শুশ্রূষায় প্রীত হয়ে আমি জানতে পারি নি যে এত দীর্ঘকাল আমার কাছে আছ; এখন আজ্ঞা দিচ্ছি তুমি গৃহে যাও।

 উতঙ্ক বললেন, ভগবান, আপনাকে গুরুদক্ষিণা কি দেব? গৌতম বললেন, তুমি আমাকে পরিতুষ্ট করেছ, তাই গুরুদক্ষিণা। তুমি যদি ষোড়শবর্ষীয় যুবা হও তবে তোমাকে আমার কন্যা দান করব, সে ভিন্ন আর কেউ তোমার তেজ ধারণ করতে পারবে না। উতঙ্ক তখনই যুবা হয়ে গুরুকন্যার পাণিগ্রহণ করলেন এবং গৌতমের আদেশ নিয়ে গুরুপত্নীকে বললেন, আপনাকে কি দক্ষিণা দেব বলুন। বার বার অনুরোধের পর অহল্যা বললেন, সৌদাস রাজার মহিষী যে দিব্য মণিময় কুণ্ডল ধারণ করেন তাই এনে দাও। উতঙ্ক কুণ্ডল আনতে গেছেন শুনে গৌতম দুঃখিত হয়ে অহল্যাকে বললেন, সৌদাস বশিষ্ঠের শাপে রাক্ষস হয়েছেন, তাঁর কাছে উতঙ্ককে পাঠানো উচিত হয় নি। অহল্যা বললেন, আমি তা জানতাম না; তোমার আশীর্বাদে উতঙ্কের কোনও অমঙ্গল হবে না।

 দীর্ঘশ্মশ্রুধারী শোণিতাক্তদেহ ঘোরদর্শন সৌদাসকে দেখে উতঙ্ক ভীত হলেন না। সৌদাস বললেন, ব্রাহ্মণ, আমি আহার অন্বেষণ করছিলাম, তুমি উপযুক্ত কালে এসেছ। উতঙ্ক বললেন, মহারাজ, আমি গুরু পত্নীর জন্য আপনার

  1. আদিপর্ব ৩-পরিচ্ছেদে উতঙ্কের উপাখ্যান কিছু অন্যপ্রকার, তিনি জনমেজয়ের সমকালীন।