পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৪১

মহিষীর কুণ্ডল ভিক্ষা করতে এসেছি; আমি প্রতিজ্ঞা করছি, গুরুপত্নীকে কুণ্ডল দিয়ে আপনার কাছে ফিরে আসব। সৌদাস সম্মত হয়ে বললেন, বনমধ্যে নির্ঝরের নিকট আমার পত্নীকে দেখতে পাবে।

 সৌদাসমহিষী মদয়ন্তীর নিকট উপস্থিত হয়ে উতঙ্ক তাঁর প্রার্থনা জানালেন। মদয়ন্তী বললেন, দেবতা যক্ষ ও মহর্ষিগণ আমার কুণ্ডল হরণ করবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করেন। এই কুণ্ডল ভূমিতে রাখলে সর্পগণ, উচ্ছিষ্ট অবস্থায় ধারণ করলে যক্ষগণ, এবং নিদ্রাকালে ধারণ করলে দেবগণ অপহরণ করেন। এই কুণ্ডল সর্বদা সুবর্ণ ক্ষরণ করে, রাত্রিকালে নক্ষত্র ও তারাগণের প্রভা আকর্ষণ করে, ধারণ করলে ক্ষুধা পিপাসা এবং অগ্নি বিষ প্রভৃতির ভয় দূর হয়। ব্রাহ্মণ, তুমি মহারাজের অভিজ্ঞান নিয়ে এস তবে কুণ্ডল পাবে।

 উতঙ্ক অভিজ্ঞান চাইলে সৌদাস বললেন, তুমি মহিষীকে এই কথা ব’লো— আমার এই দুর্গতি থেকে মুক্তি পাবার অন্য উপায় নেই; তুমি তোমার কুণ্ডলদ্বয় দান কর। উতঙ্ক সৌদাসের এই বাক্য জানালে মদয়ন্তী তাঁকে কুণ্ডল দিলেন। উতঙ্ক সৌদাসের কাছে এসে বললেন, মহারাজ, মহিষী কুণ্ডল দিয়েছেন, আমি প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করব না, কিন্তু আজ আপনার সঙ্গে আমার মিত্রতা হয়েছে, আমাকে বধ করলে আপনার মিত্রহত্যার পাপ হবে। আপনিই বলুন, আপনার কাছে আবার আসা আমার উচিত কিনা। সৌদাস বললেন, আমার কাছে ফিরে এলে নিশ্চয তোমাকে মরতে হবে, অতএব আর এসো না।

 মৃগচর্মের উত্তরীয়ে কুণ্ডল বেঁধে উতঙ্ক দ্রুতবেগে গৌতমের আশ্রমে যাত্রা করলেন। পথিমধ্যে ক্ষুধিত হয়ে তিনি একটি বিল্ব বৃক্ষে উঠে ফল পাড়তে লাগলেন, সেই সময়ে কুণ্ডলসহ তাঁর উত্তরীয় ভূমিতে পড়ে গেল। ঐরাবতবংশজাত এক সর্প কুণ্ডলদ্বয় মুখে নিয়ে বল্মীকমধ্যে প্রবেশ করলে। বৃক্ষ থেকে নেমে উতঙ্ক তাঁর দণ্ডকাষ্ঠ (ব্রহ্মচারীর যষ্টি) দিয়ে বল্মকি খুঁড়তে লাগলেন, কিন্তু পঁয়ত্রিশ দিন খুঁড়েও তিনি ভিতরে যাবার পথ পেলেন না। তখন ব্রাহ্মণবেশে ইন্দ্র এসে বললেন, নাগলোক এখান থেকে সহস্র যোজন, তুমি কেবল দণ্ডকাষ্ঠ দিয়ে পথ প্রস্তুত করতে পারবে না। এই বলে ইন্দ্র দণ্ডকাষ্ঠে তাঁর বজ্র সংযুক্ত করে দিলেন। তখন উতঙ্ক ভূমি বিদীর্ণ ক’রে সুবিশাল নাগলোকে উপস্থিত হলেন। তার দ্বারদেশে একটি কৃষ্ণবর্ণ অশ্ব ছিল, তার পুচ্ছ শ্বেত, মুখ ও চক্ষু তাম্রবর্ণ। অশ্ব উতঙ্ককে বললে, বৎস, তুমি আমার গুহ্যদ্বারে ফুৎকার দাও: ঘৃণা করো না, আমি অগ্নি, তোমার গুরুর গুরু। উতঙ্ক ফুৎকার দিলে অশ্বের রোমকূপ থেকে