পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪২
মহাভারত

ভয়ংকর ধূম নির্গত হয়ে নাগলোকে ব্যাপ্ত হ’ল। বাসুকি প্রভৃতি নাগগণ ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন এবং উতঙ্ককে পূজা ক’রে কুণ্ডল সমর্পণ করলেন। তার পর উতঙ্ক অগ্নিকে প্রদক্ষিণ ক’রে গুরুগৃহে ফিরে গেলেন এবং অহল্যাকে কুণ্ডল দিলেন।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে বৈশম্পায়ন জনমেজয়কে বললেন, মহাত্মা উতঙ্ক এই প্রকারে ত্রিলোক ভ্রমণ ক’রে কুণ্ডল এনেছিলেন; তপস্যার ফলে তাঁর অসাধারণ প্রভাব হয়েছিল।

৭। কৃষ্ণের দ্বারকায় আগমন—যুধিষ্ঠিরের সুবর্ণসংগ্রহ

 দ্বারকায় এসে কৃষ্ণ তাঁর পিতা বসুদেবকে সবিস্তারে কুরুপাণ্ডবযুদ্ধের বিবরণ দিলেন, কিন্তু দৌহিত্র অভিমন্যুর মৃত্যুসংবাদে বসুদেব অত্যন্ত কাতর হবেন এই আশঙ্কায় তা জানালেন না। সুভদ্রা বললেন, তুমি আমার পুত্রের নিধনের কথা গোপন করলে কেন? এই বলে সুভদ্রা ভূপতিত হলেন। বসুদেব শোকার্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন কৃষ্ণ অভিমন্যুর মৃত্যুর সংবাদ দিলেন। দৌহিত্রের আশ্চর্য বীরত্বের বিবরণ শুনে বসুদেব শোক সংবরণ ক’রে যথাবিধি শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান করলেন।

 হস্তিনাপুরে পাণ্ডবগণও অভিমন্যুর জন্য কাতর হয়ে কালযাপন করছিলেন। বিরাটকন্যা উত্তরা পতির শোকে দীর্ঘকাল অনাহারে ছিলেন, তার ফলে তাঁর গর্ভস্থ সন্তান ক্ষীণ হ’তে লাগল। ব্যাসদেব উত্তরাকে বললেন, যশস্বিনী, শোক ত্যাগ কর, তোমার মহাতেজা পুত্র হবে, বাসুদেবের প্রভাবে এবং আমার বাক্য অনুসারে সে পাণ্ডবগণের পরে পৃথিবী শাসন করবে।

 তার পর যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য উদ্‌যোগী হলেন। তিনি ধৃতরাষ্ট্রপুত্র যুযুৎসুকে রাজ্যরক্ষার ভার দিলেন এবং মরুত্ত রাজার সুবর্ণরাশি আনবার জন্য শুভদিনে পুরোহিত ধৌম্য ও ভ্রাতাদের সঙ্গে সসৈন্যে হিমালয়ের অভিমুখে যাত্রা করলেন। যথাস্থানে এসে যুধিষ্ঠির শিবির স্থাপনের আজ্ঞা দিলেন এবং পুষ্প মোদক পায়স মাংস প্রভৃতি উপহার দিয়ে মহেশ্বরের পূজা করলেন। যক্ষরাজ কুবের এবং তাঁর অনুচরগণের জন্যও কৃশর মাংস তিল ও অন্নাদি নিবেদিত হ’ল। তার পর যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণের অনুমতি নিয়ে ভূমি খননের