পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
মহাভারত

পুত্র চাও অতএব এই পুত্রকে বধ করব না, কিন্তু তোমার কাছে থাকাও আমার শেষ হল। গঙ্গা নিজের পরিচয় দিলেন এবং বসুগণের এই বৃত্তান্ত বললেন।—

 একদা পৃথু প্রভৃতি বন্ধুগণ নিজ নিজ পত্নীসহ সুমেরু পর্বতের পার্শ্ববর্তী বশিষ্ঠের তপোবনে বিহার করতে এসেছিলেন। বশিষ্ঠের কামধেনু নন্দিনীকে দেখে দ্যু-নামক বসুর পত্নী তাঁর স্বামীকে বললেন, আমার সখী রাজকন্যা জিতবতীকে এই ধেনু উপহার দিতে চাই। পত্নীর অনুরোধে দ্যু-বসু নন্দিনীকে হরণ করলেন। বশিষ্ঠ আশ্রমে এসে দেখলেন নন্দিনী নেই। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দিলেন, যারা আমার ধেনু নিয়েছে তারা মানুষ হয়ে জন্মাবে। বসুগণের অনুনয়ে প্রসন্ন হয়ে বশিষ্ঠ বললেন, তোমরা সকলে এক বৎসর পরে শাপমুক্ত হবে, কিন্তু দ্যু-বসু নিজ কর্মের ফলে দীর্ঘকাল মনুষ্যলোকে বাস করবেন। তিনি ধার্মিক, সর্বশাস্ত্রবিশারদ, পিতার প্রিয়কারী এবং স্ত্রীসম্ভোগত্যাগী হবেন।

 তার পর গঙ্গা বললেন, মহারাজ, অভিশপ্ত বসুগণের অনুরোধে আমি তাদের প্রসব ক’রে জলে নিক্ষেপ করেছি, কেবল দ্যু-বসু—যিনি এই অষ্টম পুত্র—দীর্ঘজীবী হয়ে বহুকাল মনুষ্যলোকে বাস করবেন এবং পুনর্বার স্বর্গলোকে যাবেন। এই ব’লে গঙ্গা নবজাত পুত্রকে নিয়ে অন্তর্হিত হলেন।

১৬। দেবব্রত-ভীষ্ম—সত্যবতী

 শান্তনু দঃখিত মনে তাঁর রাজধানী হস্তিনাপুরে গেলেন। তিনি সর্বপ্রকার রাজগুণে মণ্ডিত ছিলেন এবং কামরাগবর্জিত হয়ে ধর্মানুসারে রাজ্যশাসন করতেন। ছত্রিশ বৎসর তিনি স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ ক’রে বনবাসী হয়েছিলেন।

 একদিন তিনি মৃগের অনুসরণে গঙ্গাতীরে এসে দেখলেন, দেবকুমারতুল্য চারুদর্শন দীর্ঘকায় এক বালক শরবর্ষণ ক’রে গঙ্গা আচ্ছন্ন করছে। শান্তনুকে মাথায় মোহিত ক’রে সেই বালক অন্তর্হিত হ’ল। তাকে নিজের পুত্র অনুমান ক’রে শান্তনু বললেন, গঙ্গা, আমার পুত্রকে দেখাও। তখন শুভ্রবসনা সালংকারা গঙ্গা পুত্রের হাত ধরে আবির্ভূত হয়ে বললেন, মহারাজ, এই আমার অষ্টমগর্ভজাত পুত্র, একে আমি পালন ক’রে বড় করেছি। এ বশিষ্ঠের কাছে বেদ অধ্যয়ন করেছে। শুক্র ও বৃহস্পতি যত শাস্ত্র জানেন, জামদগ্ন্য যত অস্ত্র জানেন, সে সমস্তই এ জানে। এই মহাধনুর্ধর রাজধর্মজ্ঞ পুত্রকে তুমি গৃহে নিয়ে যাও।

 দেবব্রত নামক এই পুত্রকে শান্তনু রাজভবনে নিয়ে গেলেন এবং তাকে