পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৪৩

আদেশ দিলেন। সুবর্ণময় ক্ষুদ্র বৃহৎ বহুবিধ ভাণ্ড ভৃঙ্গার কটাহ এবং শত সহস্র বিচিত্র আধার সেই খনি থেকে উদ্ধৃত হ’ল। তার পর যুধিষ্ঠির পুনর্বার মহাদেবের পূজা করলেন এবং বহু সহস্র উষ্ট্র অশ্ব হস্তী গর্দভ ও শকটের উপর সেই স্বর্ণরাশি বন্ধন ক’রে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন। গুরুভারপীড়িত বাহনগণ দুই ক্রোশ অন্তর বিশ্রাম ক’রে চলতে লাগল!

৮। পরীক্ষিতের জন্ম

 যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞের কাল আগত হ’লে কৃষ্ণ তাঁর প্রতিশ্রুতি স্মরণ করলেন এবং বলরামকে অগ্রবর্তী ক’রে কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদ, ভগিনী সুভদ্রা, পুত্র প্রদ্যুম্ন চারুদেষ্ণ ও শাম্ব, এবং সাত্যকি কৃতবর্মা প্রভৃতি বীরগণের সঙ্গে হস্তিনাপুরে উপস্থিত হলেন।

 সেই সময়ে পরীক্ষিৎ নিশ্চেষ্ট শব রূপে প্রসূত হলেন। পুরবাসিগণের হর্ষধ্বনি উত্থিত হয়েই নিবৃত্ত হ’ল। কৃষ্ণ ব্যথিত হয়ে সাত্যকির সঙ্গে অন্তঃপুরে গেলেন, কুন্তী দ্রৌপদী সুভদ্রা ও অন্যান্য কুরুনারীগণ সরোদনে তাঁকে বেষ্টন করলেন। কুন্তী বললেন, বাসুদেব, তুমিই আমাদের একমাত্র গতি, এই কুরুকুল তোমারই আশ্রিত। তোমার ভাগিনেয় অভিমন্যুর পুত্র অশ্বত্থামার অস্ত্রপ্রভাবে মৃত হয়ে জন্মেছে, তুমি তাকে জীবিত ক’রে উত্তরা সুভদ্রা দ্রৌপদী ও আমাকে রক্ষা কর। এই বালক পাণ্ডবগণের প্রাণ স্বরূপ, এবং আমার পতি শ্বশুর ও অভিমন্যুর পিণ্ডদাতা। তুমি পূর্বে বলেছিলে যে একে পুনর্জীবিত করবে, এখন সেই প্রতিজ্ঞা পালন কর। অভিমন্যু উত্তরাকে বলেছিল—তোমার পুত্র আমার মাতুলগৃহে ধনুর্বেদ ও নীতিশাস্ত্র শিখবে। মধুসূদন, আমরা বিনীত হয়ে প্রার্থনা করছি, তুমি কুরুকুলের কল্যাণ কর।

 সুভদ্রা আর্তকণ্ঠে বললেন, পুণ্ডরীকাক্ষ, এই দেখ, পার্থের পৌত্রও অন্যান্য কুরুবংশীয়ের ন্যায় গতাসু হয়েছে। পাণ্ডবগণ ফিরে এসে এই সংবাদ শুনে কি বলবেন? তুমি থাকতে এই বালক যদি জীবিত না হয় তবে তোমাকে দিয়ে আমাদের কোন্ উপকার হবে? তুমি ধর্মাত্মা সত্যবাদী সত্যবিক্রম, তোমার শক্তি আমি জানি। মেঘ যেমন জলবর্ষণ ক’রে শস্যকে সঞ্জীবিত করে সেইরূপ তুমি অভিমন্যুর মৃত পুত্রকে জীবিত কর। আমি তোমার ভগিনী, পুত্রহীনা; শরণাপন্ন হয়ে বলছি, দয়া কর।