পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪৪
মহাভারত

 সুভদ্রা প্রভৃতিকে আশ্বাস দিয়ে কৃষ্ণ সূতিকাগৃহে প্রবেশ ক’রে দেখলেন, সেই গৃহ শুভ্র পুষ্পমালায় সজ্জিত, চতুর্দিকে পূর্ণকলস রয়েছে, ঘৃত, তিন্দুক (গাব) কাষ্ঠের অঙ্গার, সর্ষপ, পরিষ্কৃত অস্ত্র, অগ্নি ও অন্যান্য রাক্ষসভয়বারক দ্রব্য যথাস্থানে রাখা আছে, বৃদ্ধা নারী ও দক্ষ ভিষগ্‌গণ উপস্থিত রয়েছেন। এইসকল দেখে কৃষ্ণ প্রীত হয়ে সাধু সাধু বললেন। তখন দ্রৌপদী উত্তরাকে বললেন, কল্যাণী, তোমার শ্বশুর অচিন্ত্যাত্মা মধুসূদন এসেছেন। উত্তরা অশ্রু সংবরণ ও দেহ আচ্ছাদন ক’রে করুণস্বরে বললেন, পুণ্ডরীকাক্ষ, দেখুন, আমি পুত্রহীনা হয়েছি, অভিমন্যুর ন্যায় আমিও নিহত হয়েছি। দ্রোণপুত্রের ব্রহ্মাস্ত্রে বিনষ্ট আমার পুত্রকে আপনি জীবিত করুন। অত্থামার অস্ত্রমোচনকালে যদি আপনারা বলতেন—এই ঈষীকা প্রসূতির প্রাণনাশ করুক, তবে ভাল হ’ত। গোবিন্দ, আমি নতশিরে প্রার্থনা করছি, এই বালককে সঞ্জীবিত করুন, নতুবা আমি প্রাণত্যাগ করব। দ্রোণপুত্র আমার সকল মনোরথ নষ্ট করেছে, আমার জীবনে কি প্রয়োজন? আমার আশা ছিল পুত্রকে কোলে নিয়ে আপনাকে প্রণাম করব, তা বিফল হ’ল। আমার চঞ্চলনয়ন স্বামী আপনার প্রিয় ছিলেন, তাঁর মৃত পুত্রকে আপনি দেখুন। এর পিতা যেমন কৃতঘ্ন ও নিষ্ঠুর এও সেইরূপ, তাই পাণ্ডবগণের সম্পদ ত্যাগ ক’রে যমসদনে গেছে।

 এইপ্রকার বিলাপ ক’রে উত্তরা মূর্ছিত হয়ে ভূপতিত হলেন, কুন্তী প্রভৃতি তাঁকে তুলে কাঁদতে লাগলেন। সংজ্ঞালাভ ক’রে উত্তরা মৃত পুত্রকে কোলে নিয়ে বললেন, তুমি ধর্মজ্ঞের পুত্র হয়ে বৃষ্ণিপ্রবীর কৃষ্ণকে প্রণাম করছ না কেন? তুমি তোমার পিতার কাছে গিয়ে আমার হয়ে ব’লো—বীর, কাল পূর্ণ না হ’লে কেউ মরে না, তাই আমি পতিপুত্রহীনা হয়েও জীবিত আছি। আমি ধর্মরাজের অনুমতি নিয়ে ঘোর বিষ খাব বা অগ্নিপ্রবেশ করব। পুত্র, ওঠ, তোমার শোকার্তা প্রপিতামহী কুন্তী এবং আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত কর; তোমার চঞ্চলনয়ন পিতার তুল্য যাঁর মুখ সেই লোকনাথ পুণ্ডরীকাক্ষ কৃষ্ণকে দেখ।

 কৃষ্ণ বললেন, উত্তরা, আমার কথা মিথ্যা হবে না: দেখ, সকলের সমক্ষেই এই বালককে পুনর্জীবিত করব। যদি আমি কখনও মিথ্যা না ব’লে থাকি, যুদ্ধে বিমুখ না হয়ে থাকি, যদি ধর্ম ও ব্রাহ্মণগণ আমার প্রিয় হন, তবে অভিমন্যুর এই পুত্র জীবনলাভ করুক। যদি অর্জুনের সহিত কদাচ আমার বিরোধ না হয়ে থাকে, যদি সত্য ও ধর্ম নিত্য আমাতে প্রতিষ্ঠিত থাকে, যদি কংস ও কেশীকে আমি