পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৪৫

ধর্মানুসারে বধ ক’রে থাকি, তবে এই বালক জীবিত হ’ক। বাসুদেব এইরূপ বললে শিশু ধীরে ধীরে চেতনা পেয়ে স্পন্দিত হ’তে লাগল।

 অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্থ কৃষ্ণ কর্তৃক নিবর্তিত হয়ে ব্রহ্মার কাছে চ’লে গেল। তখন বালকের তেজঃপ্রভাবে সূতিকাগৃহ আলোকিত হ’ল, রাক্ষসরা পালিয়ে গেল, আকাশবাণী হ’ল— সাধু কেশব, সাধু। বালকের অঙ্গসঞ্চালন দেখে কুরুকুলের নারীগণ হৃষ্ট হলেন, ব্রাহ্মণেরা স্বস্তিবাচন করলেন, মল্ল নট দৈবজ্ঞ সূত মাগধ প্রভৃতি কৃষ্ণের স্তব করতে লাগল। উত্তরা পুত্রকে কোলে নিয়ে সহর্ষে কৃষ্ণকে প্রণাম করলেন। কৃষ্ণ বহু রত্ন উপহার দিলেন এবং ভরতবংশ পরিক্ষীণ হ’লে অভিমন্যুর এই পুত্র জন্মেছে এজন্য তার নাম রাখলেন—পরীক্ষিৎ। পরীক্ষিতের বয়স এক মাস হ’লে পাণ্ডবগণ ফিরে এলেন, তখন সুসজ্জিত হস্তিনাপুরে নানাপ্রকার উৎসব হতে লাগল।

৯। যজ্ঞাশ্বের সহিত অর্জুনের যাত্রা

 কিছুদিন পরে ব্যাসদেব হস্তিনাপুরে এলে যুধিষ্ঠির তাঁকে বললেন, ভগবান, আপনার প্রসাদে আমি যজ্ঞের জন্য ধনরত্ন সংগ্রহ করেছি, এখন আপনি যজ্ঞের অনুমতি দিন। ব্যাস বললেন, আমি অনুমতি দিলাম, তুমি অশ্বমেধ যজ্ঞ ক’রে বহু দক্ষিণা দাও, তার ফলে নিশ্চয় পাপমুক্ত হবে।

 যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, যদুনন্দন, তোমাকে জন্ম দিয়ে দেবকী সুপুত্রবতী হয়েছেন, তোমার প্রভাবে আমরা ভোগ্য বিষয় অর্জন করেছি, তোমার পরাক্রম ও বুদ্ধিতে পৃথিবী জয় করেছি। তুমি আমাদের পরম গুরু, তুমিই যজ্ঞ, তুমিই ধর্ম, তুমিই প্রজাপতি; অতএব তুমিই দীক্ষিত হয়ে আমার যজ্ঞ সম্পাদন কর। কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, আপনি কুরুবীরগণের অগ্রণী হয়ে ধর্ম পালন করছেন, আপনি আমাদের রাজা ও গুরু। অতএব আপনিই দীক্ষিত হয়ে যজ্ঞ করুন এবং আপনার অভীষ্ট কার্যে আমাদের নিয়োজিত করুন।

 যুধিষ্ঠির সম্মত হ’লে ব্যাসদেব তাঁকে বললেন, পৈল যাজ্ঞবল্ক্য ও আমি, আমরা তিন জনে যজ্ঞের সকল কর্ম সম্পাদন করব। চৈত্রপূর্ণিমায় তুমি যজ্ঞের জন্য দীক্ষিত হবে। অশ্ববিদ্যাবিশারদ সূত ও ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞীয় অশ্ব নির্বাচন করুন, তার পর সেই অশ্ব মুক্ত হয়ে তোমার যশোরাশি প্রদর্শন ক’রে সাগরাম্বরা পৃথিবী পরিভ্রমণ করুক। দিব্যধনুর্বাণধারী ধনঞ্জয় সেই অশ্বকে রক্ষ করবেন।