পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪৬
মহাভারত

ভীমসেন ও নকুল রাজ্যপালন এবং সহদেব কুটুম্বগণের তত্ত্বাবধান করবেন। ব্যাসের উপদেশ অনুসারে সকল ব্যবস্থা ক’রে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, মহাবাহু, কোনও রাজা যদি তোমাকে বাধা দেন তবে তুমি চেষ্টা করবে যাতে যুদ্ধ না হয়, এবং তাঁকে আমার এই যজ্ঞে নিমন্ত্রণ করবে।

 যথাকালে যুধিষ্ঠির দীক্ষিত হয়ে স্বর্ণমালা কৃষ্ণাজিন দণ্ড ও ক্ষৌমবাস ধারণ করলেন। যজ্ঞের অশ্ব ছেড়ে দেওয়া হ’ল; অর্জুন শ্বেত অশ্বে আরোহণ ক’রে সেই কৃষ্ণসার (শ্বেতকৃষ্ণ মিশ্রিতবর্ণ) যজ্ঞাশ্বের অনুগমন করলেন। বহু বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় বীর অর্জুনের সঙ্গে যাত্রা করলেন। সকলে বললেন, অর্জুন, তোমার মঙ্গল হ’ক, তুমি নির্বিঘ্নে ফিরে এসো।

১০। অর্জুনের নানা দেশে যুদ্ধ—বভ্রুবাহন উলূপী ও চিত্রাঙ্গদা

 ত্রিগর্তদেশের যেসকল বীর কুরুক্ষেত্রযুদ্ধে হত হয়েছিলেন তাঁদের পুত্রপৌত্রগণ যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞাশ্ব নেবার জন্য যুদ্ধ করতে এলেন। অর্জুন বিনয়বাক্যে তাঁদের নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করলেন কিন্তু তাঁরা শুনলেন না, অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অবশেষে তাঁরা পরাজিত হয়ে বললেন, পার্থ, আমরা সকলে আপনার কিংকর, আদেশ করুন কি করব। অর্জুন বললেন, আমি আপনাদের প্রাণরক্ষা করলাম, আপনারা আমার শাসনে থাকবেন।

 তার পর যজ্ঞীয় অশ্ব প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরে উপস্থিত হ’ল, ভগদত্তের পুত্র বজ্রদত্ত তাকে হরণ করতে এলেন। তিন দিন ঘোর যুদ্ধের পর বজ্রদত্ত তাঁর মহাহস্তী অর্জুনের দিকে ধাবিত করলেন। অর্জুন নারাচের আঘাতে সেই হস্তীকে বধ ক’রে বজ্রদত্তকে বললেন, মহারাজ, ভয় নেই, তোমার প্রাণ হরণ করব না। আগামী চৈত্রপূর্ণিমায় ধর্মরাজের অশ্বমেধ যজ্ঞ হবে, তাঁর আদেশে আমি তোমাকে নিমন্ত্রণ করছি, তুমি সেই যজ্ঞে যেয়ো। পরাজিত বজ্রদত্ত সম্মত হলেন।

 অশ্ব সিন্ধুদেশে এলে সেখানকার রাজারা জয়দ্রথের নিধন স্মরণ ক’রে ক্রুদ্ধ হয়ে বিপুল সৈন্য নিয়ে অর্জুনকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু যুদ্ধে পরাভূত হলেন। তখন ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা জয়দ্রথপত্নী দুঃশলা তাঁর বালক পৌত্রের সঙ্গে রথারোহণে অর্জুনের কাছে এলেন। ধনু ত্যাগ ক’রে অর্জুন বললেন, ভগিনী, আমি কি করব বল। দুঃশলা বললেন, তোমার ভাগিনেয় সুরথের এই পুত্র তোমাকে প্রণাম করছে, তুমি একে কৃপাদৃষ্টিতে দেখ। অর্জুন বললেন, এর পিতা কোথায়? দুঃশলা