পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপৰ্ব
৬৪৭

বললেন, তুমি যুদ্ধার্থী হয়ে এখানে এসেছ শুনে আমার পুত্র সুরথ অকস্মাৎ প্রাণত্যাগ করেছে। দুর্যোধন ও মন্দবুদ্ধি জয়দ্রথকে তুমি ভুলে যাও, তোমার ভগিনী ও তার পৌত্রের প্রতি দয়া কর। পরীক্ষিৎ যেমন অভিমন্যুর পুত্র, এই বালক তেমন সুরথের পাত্র। অর্জুন অতিশয় দুঃখিত হলেন এবং দুঃশলাকে সান্ত্বনা দিয়ে গৃহে পাঠিয়ে দিলেন।

 যজ্ঞাশ্ব বিচরণ করতে করতে মণিপরে এল। পিতা ধনঞ্জয় এসেছেন শুনে মণিপুরপতি বভ্রুবাহন ব্রাহ্মণগণকে অগ্রবর্তী ক’রে সবিনয়ে উপস্থিত হলেন। অর্জুন রুষ্ট হয়ে তাঁর পুত্রকে বললেন, তোমার আচরণ ক্ষত্রিয় ধর্মের বহির্ভূত; আমি যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞাশ্বের সঙ্গে তোমার রাজ্যে এসেছি, তুমি যুদ্ধ করছ না কেন? অর্জুনের তিরস্কার শুনে নাগকন্যা উলূপী পৃথিবী ভেদ ক’রে উপস্থিত হয়ে বভ্রুবাহনকে বললেন, পুত্র, আমি তোমার মাতা (বিমাতা) উলূপী; তুমি তোমার মহাবীর পিতার সঙ্গে যুদ্ধ কর, তা হ’লেই ইনি প্রীত হবেন। তখন বভ্রুবাহন স্বর্ণময় বর্ম ও শিরস্ত্রাণ ধারণ ক’রে রথে উঠলেন এবং অনুচরদের সঙ্গে গিয়ে অশ্ব হরণ করলেন। অর্জুন প্রীত হয়ে পত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তুমূল যুদ্ধের পর অর্জুন শরবিদ্ধ ও অচেতন হয়ে ভূমিতে প’ড়ে গেলেন। পিতার এই অবস্থা দেখে বভ্রুবাহনও মোহগ্রস্ত হয়ে ভূপতিত হলেন।

 মণিপুররাজমাতা চিত্রাঙ্গদা রণস্থলে এসে পতিপুত্রকে দেখে শোকার্ত হয়ে তাঁর সপত্নীকে বললেন, উলূপী, তোমার জন্যই আমার বালক পুত্রের হস্তে মহাবীর অর্জুন নিহত হয়েছেন। তুমি ধর্মশীলা, কিন্তু পুত্রকে দিয়ে পতিকে বিনষ্ট ক’রে তোমার অনুতাপ হচ্ছে না কেন? আমার পুত্রও মরেছে, কিন্তু আমি তার জন্য শোক না ক’রে পতির জন্যই শোকাকুল হয়েছি। আমি অনুনয় করছি, অর্জুন যদি কিছ অপরাধ ক’রে থাকেন তো ক্ষমা ক’রে এঁকে জীবিত কর। ইনি বহু ভার্যা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু পুরুষের পক্ষে তা অপরাধ নয়। এইরূপ বিলাপ ক’রে চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের চরণ গ্রহণ ক’রে প্রায়োপবেশন করলেন।

 এই সময়ে বভ্রুবাহনের চেতনা ফিরে এল। তিনি ভূপতিত পিতা ও জননীকে দেখে শোকার্ত হয়ে বললেন, আমি নৃশংস পিতৃহন্তা, ব্রাহ্মণরা আদেশ দিন আমি কোন্ প্রায়শ্চিত্ত করব। আমার উচিত মৃত পিতার চর্মে আবৃত হয়ে এবং এঁর মস্তক ধারণ ক’রে দ্বাদশ বর্ষ যাপন করা। নাগকন্যা, এই দেখুন, আমি অর্জুনকে বধ ক’রে আপনার প্রিয়সাধন করেছি, এখন আমিও পিতার অনুগমন