পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪৮
মহাভারত

করব। এই ব’লে বভ্রুবাহন আচমন ক’রে তাঁর মাতার সহিত প্রায়োপবিষ্ট হলেন।

 তখন উলূপী সঞ্জীবন মণি স্মরণ করলেন; তৎক্ষণাৎ সেই মণি নাগলোক থেকে চ’লে এল। উলূপী তা হাতে নিয়ে বভ্রুবাহনকে বললেন, পুত্র, শোক ক’রো না, ওঠ; অর্জুন দেবগণেরও অজেয়। ইনি তোমার বল পরীক্ষার ইচ্ছায় যুদ্ধে করতে এসেছেন, তাঁর প্রীতির নিমিত্ত আমি এই মোহিনী মায়া দেখিয়েছি। এই দিব্য মণির স্পর্শে মৃত নাগগণ জীবিত হয়, তুমি পার্থের বক্ষে এই মণি রাখ। বভ্রুবাহন তাঁর পিতার বক্ষে সেই সঞ্জীবন মণি রাখলেন। তখন অর্জুন যেন দীর্ঘনিদ্রা থেকে জাগরিত হলেন এবং মস্তক আঘ্রাণ ক’রে পুত্রকে আলিঙ্গন করলেন।

 অর্জুন উলূপীকে বললেন, নাগরাজনন্দিনী, তুমি ও মণিপুরপতির মাতা চিত্রাঙ্গদা কেন এখানে এসেছ? আমার বা বভ্রুবাহনের বা তোমার সপত্নী চিত্রাঙ্গদার কোনও অপরাধ হয় নি তো? উলূপী সহাস্যে বললেন, তোমরা কেউ আমার কাছে অপরাধী নও। মহাবাহু ধনঞ্জয়, তুমি মহাভারতযুদ্ধে অধর্মাচরণ ক’রে শান্তনপুত্র ভীষ্মকে শিখণ্ডীর সাহায্যে নিপাতিত করেছিলে। আজ পুত্র কর্তৃক নিপাতিত হয়ে তুমি সেই পাপ থেকে মুক্তি পেলে। এই প্রায়শ্চিত্ত না হলে তুমি মরণের পর নরকে যেতে। ভাগীরথী ও বসুগণ তোমার পাপশান্তির এই উপায় বলেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রও তোমাকে জয় করতে পারেন না; পুত্র আত্মস্বরূপ, তাই তুমি পুত্রকর্তৃক পরাজিত হয়েছ।

 অর্জুন বললেন, দেবী, তুমি উপযুক্ত কার্য করেছ। তার পর তিনি বভ্রুবাহনকে বললেন, চৈত্রপূর্ণিমায় যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন, তুমি তোমার দুই মাতা এবং অমাত্যগণের সঙ্গে সেখানে যেয়ো। বভ্রুবাহন বললেন, ধর্মজ্ঞ, আমি সেই যজ্ঞে দ্বিজগণের পরিবেশক হব। আজ রাত্রিতে আপনি দুই ভার্যার সঙ্গে আপনার এই ভবনে বিশ্রাম করুন, কাল আবার অশ্বের অনুগমন করবেন। অর্জুন বললেন, মহাবাহু, আমি তোমার ভবনে যেতে পারব না; এই অশ্ব যেখানে যাবে আমাকে সেখানেই যেতে হবে। তোমার মঙ্গল হ’ক, আমি আর এখানে থাকতে পারব না। এই ব’লে পুত্র ও দুই পত্নীর নিকট বিদায় নিয়ে অর্জুন প্রস্থান করলেন।


 যজ্ঞাশ্ব মগধে এলে সহদেবপুত্র (জরাসন্ধের পৌত্র) রাজা মেঘসন্ধি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এলেন, কিন্তু পরাস্ত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করলেন।