পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপর্ব
৬৪৯

অর্জুন তাঁকে যজ্ঞে উপস্থিত হবার জন্য নিমন্ত্রণ করলেন। তার পর অর্জুন অশ্বের অনুসরণে সমুদ্রতীর দিয়ে বঙ্গ পুণ্ড্র কোশল প্রভৃতি দেশে গিয়ে সেখানকার ম্লেচ্ছগণকে পরাস্ত করলেন। দক্ষিণে নানা দেশে বিচরণ করে অশ্ব চেদিরাজ্যে এল। শিশুপালপুত্র শরভ পরাজয় স্বীকার করলেন। কাশী অঙ্গ কোশল কিরাত ও তঙ্গন দেশের রাজারা অর্জুনের সংবর্ধনা করলেন, এবং দশার্ণরাজ চিত্রাঙ্গদ ও নিষাদরাজ একলব্যের পুত্র যুদ্ধে পরাস্ত হলেন। অর্জুন পুনর্বার দক্ষিণ সমুদ্রের তীর দিয়ে চললেন এবং দ্রাবিড় অন্ধ্র মাহিষক ও কোল্বগিরিবাসী বীরগণকে জয় ক’রে সুরাষ্ট্র গোকর্ণ ও প্রভাস অতিক্রম ক’রে দ্বারকায় এলেন। যাদব কুমারগণ অর্জুনকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু বৃষ্ণি ও অন্ধকগণের অধিপতি উগ্রসেন এবং অর্জনের মাতুল বসুদেব তাঁদের নিবারিত ক’রে অর্জুনের সংবর্ধনা করলেন।

 তার পর পশ্চিম সমুদ্রের উপকুল এবং সমৃদ্ধ পঞ্চনদ প্রদেশ অতিক্রম ক’রে অশ্ব গান্ধার রাজ্যে এল। গান্ধারপতি শকুনিপুত্র বহু সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করতে এলেন, অর্জুনের অনুরোধেও নিবৃত্ত হলেন না। অর্জুন শরাঘাতে গান্ধারপতির শিরস্ত্রাণ বিচ্যুত করলেন। গান্ধারপতি ভীত হয়ে সসৈন্যে পলায়ন করলেন, তাঁর বহু সৈন্য অর্জুনের অস্ত্রাঘাতে বিনষ্ট হ’ল। তখন গান্ধাররাজমাতা বৃদ্ধমন্ত্রীর সঙ্গে অর্ঘ্যহস্তে অর্জুনের কাছে এসে তাঁকে প্রসন্ন করলেন। শকুনিপুত্রকে সান্ত্বনা দিয়ে অর্জুন বললেন, ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীকে স্মরণ ক’রে আমি তোমার প্রাণহরণ করি নি, কিন্তু তোমার বুদ্ধির দোষে তোমার অনুচরগণ নিহত হ’ল। তার পর অর্জুন শকুনিপুত্রকে যজ্ঞে আসবার জন্য নিমন্ত্রণ ক’রে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন।

১১। অশ্বমেধ যজ্ঞ

 মাঘ মাসের দ্বাদশী তিথিতে শুভনক্ষত্রযোগে যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের ডেকে এনে ভীমসেনকে বললেন, সংবাদ পেয়েছি অর্জুন শীঘ্র ফিরে আসবেন। তুমি যজ্ঞস্থান নিরূপণের জন্য বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের পাঠাও। যুধিষ্ঠিরের আদেশ অনুসারে স্থান নিরূপিত হ’লে স্থপতিগণ শত শত প্রাসাদ গৃহ স্তম্ভ তোরণ ও পথ সমন্বিত যজ্ঞায়তন নির্মাণ করলেন। আমন্ত্রিত নরপতিগণ বহু রত্ন স্ত্রী অশ্ব ও আয়ুধ নিয়ে উপস্থিত হলেন, তাঁদের শিবিরে সাগরগর্জনের ন্যায় কোলাহল হ’তে লাগল। যজ্ঞসভায় হেতুবাদী বাগ্মী ব্রাহ্মণগণ পরস্পরকে পরাস্ত করবার জন্য