পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫০
মহাভারত

তর্ক করতে লাগলেন। আমন্ত্রিত রাজারা ইচ্ছানুসারে বিচরণ ক’রে যজ্ঞের আয়োজন দেখতে লাগলেন। স্থানে স্থানে স্বর্ণভূষিত যূপকাষ্ঠ, স্থলচর জলচর পার্বত ও আরণ্য বিবিধ পশু পক্ষী ও উদ্ভিদ, অন্নের স্তূপ, দধি ও ঘৃতের হ্রদ প্রভৃতি দেখে তাঁরা বিস্মিত হলেন। এক এক লক্ষ ব্রাহ্মণভোজনের পর দুন্দুভি বাজতে লাগল; প্রতিদিন এইরূপে বহু বার দন্দুভিধ্বনি শোনা গেল।

 কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, দ্বারকাবাসী একজন দূত দ্বারা অর্জুন আমাকে এই কথা ব’লে পাঠিয়েছেন।—কৃষ্ণ, তুমি রাজা যষ্ঠিরকে ব’লো যেন সমাগত রাজগণের সমুচিত সৎকার হয়, এবং অর্ঘ্যদানকালে এমন কিছু না করা হয় যাতে রাজাদের বিদ্বেষের ফলে প্রজানাশ হ’তে পারে[১]। যুধিষ্ঠির বললেন, কৃষ্ণ, তোমার কথা শুনে আমি আনন্দিত হয়েছি। আমি শুনেছি অর্জুন যেখানে গেছেন সেখানেই রাজাদের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়েছে। তিনি সর্বদাই দুঃখভোগ করেন, কিন্তু আমি তাঁর দেহে কোনও অনিষ্টসূচক লক্ষণ দেখি নি। কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, পুরুষসিংহ ধনঞ্জয়ের পিণ্ডিকা (পায়ের গুলি) অধিক স্থূল; এই লক্ষণের ফলে তাঁকে সর্বদা ভ্রমণ করতে হয়; এ ভিন্ন তাঁর দেহে অশুভসূচক আর কিছু আমি দেখি না। যুধিষ্ঠির বললেন, তোমার কথা ঠিক। দ্রৌপদী কৃষ্ণের দিকে অসূয়াসূচক[২] বক্র দৃষ্টিপাত করলেন, কৃষ্ণও সস্নেহে তাঁর সখীর দিকে ফিরে চাইলেন। ভীমসেন প্রভৃতি সকৌতুকে অর্জুনের ওই কথা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন।

 পরদিন অর্জুন যজ্ঞাশ্বসহ হস্তিনাপুরে ফিরে এলেন এবং ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠির প্রভৃতিকে অভিবাদন ক’রে কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করলেন। এই সময়ে মণিপুররাজ বভ্রুবাহনও তাঁর মাতৃদ্বয়ের সহিত উপস্থিত হলেন এবং অর্জুনকে বন্দনার পর পিতামহী কুন্তীর উত্তম ভবনে গেলেন। চিত্রাঙ্গদা ও উলূপী বিনীতভাবে কুন্তী দ্রৌপদী সুভদ্রা প্রভৃতির সহিত মিলিত হলেন। বভ্রুবাহনকে কৃষ্ণ দিব্যাশ্বযুক্ত স্বর্ণভূষিত মহামূল্য রথ উপহার দিলেন; যুধিষ্ঠিরাদিও তাঁকে বিপুল অর্থ দিলেন।

 তৃতীয় দিবসে ব্যাসদেব যুধিষ্ঠিরকে বললেন, যজ্ঞের মুহূর্ত উপস্থিত হয়েছে, আজ থেকে তুমি যজ্ঞ আরম্ভ কর। মহারাজ, এই যজ্ঞে তুমি ব্রাহ্মণগণকে তিন গুণ দক্ষিণা দাও, তাতে তিন অশ্বমেধের ফল পাবে এবং জ্ঞাতিবধের পাপ

  1. অর্থাৎ রাজসূয় যজ্ঞের সময় যা ঘটেছিল তেমন যেন না হয়।
  2. বোধ হয় এর অর্থ— কৃত্রিম কোপসূচক।