থেকে মুক্ত হবে। অনন্তর বেদজ্ঞ যাজকগণ যথাবিধি সকল কার্য করতে লাগলেন। বিল্ব খদির পলাশ এই তিন প্রকার কাষ্ঠের প্রত্যেকের ছয়, দেবদারুর দুই, এবং শ্লেষ্মাতক[১] কাষ্ঠের একটি যূপ নির্মিত হ’ল। তা ছাড়া ধর্মরাজের আদেশে ভীম স্বর্ণভূষিত বহু যূপ শোভার জন্য প্রস্তুত করালেন। চারটি অগ্নিস্থান যুক্ত আঠার হাত যজ্ঞবেদী ত্রিকোণ গরুড়াকারে নির্মিত হ’ল। ঋত্বিগ্গণ নানা দেবতার উদ্দেশে বহু পশু পক্ষী বৃষ ও জলচর আহরণ করলেন। তিন শত পশুর সঙ্গে যজ্ঞীর অশ্বও যূপবদ্ধ হ’ল।
অগ্নিতে অন্যান্য পশু যথাবিধি উৎসর্গের পর ব্রাহ্মণগণ শাস্ত্রানুসারে যজ্ঞীয় অশ্ব বধ ক’রে দ্রুপদনন্দিনীকে তার নিকটে বসালেন। তার পর তাঁরা অশ্বের বসা অগ্নিতে দিলেন, যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভ্রাতারা সেই সর্বপাপনাশক বসার ধূম আঘ্রাণ করলেন। ষোল জন ঋত্বিক অশ্বের অঙ্গসকল অগ্নিতে আহতি দিলেন। এইরূপে যজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে সশিষ্য ব্যাসদেব যুধিষ্ঠিরের সংবর্ধনা করলেন। যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণকে সহস্র কোটি নিষ্ক এবং ব্যাসদেবকে বসুন্ধরা দক্ষিণা দিলেন। ব্যাস বললেন, মহারাজ, ব্রাহ্মণেরা ধনার্থী, তুমি বসুন্ধরার পরিবর্তে আমাকে ধন দাও। যুধিষ্ঠির বললেন, অশ্বমেধ মহাযজ্ঞে পৃথিবী-দক্ষিণাই বিহিত; অর্জুন যা জয় করেছেন সেই পৃথিবী আমি দান করেছি, আপনারা তা ভাগ ক’রে নিন। এই পৃথিবী এখন ব্রহ্মস্ব, আমি আর তা নিতে পারি না, আমি বনপ্রবেশ করব।
দ্রৌপদী ও ভীমাদি বললেন, মহারাজ যথার্থ বলেছেন। তখন সভাস্থ সকলে রোমাঞ্চিত হলেন, অন্তরীক্ষ থেকে সাধু সাধু ধ্বনি শোনা গেল, ব্রাহ্মণগণ হৃষ্ট হয়ে প্রশংসা করতে লাগলেন। ব্যাসদেব পুনর্বার বললেন, মহারাজ, আমি তোমাকে পৃথিবী প্রত্যর্পণ করছি, তুমি তার পরিবর্তে স্বর্ণ দাও। কৃষ্ণ বললেন, ধর্মরাজ, আপনি ভগবান ব্যাসের আদেশ পালন করুন। তখন যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভ্রাতারা ত্রিগুণ দক্ষিণার কোটি কোটি গুণ দান করলেন, ব্যাস তা চার ভাগ ক’রে ঋত্বিকদের মধ্যে বিতরণ করলেন। যজ্ঞায়তনে যে সমস্ত স্বর্ণময় অলংকার তোরণ যূপ ঘট স্থালী ইষ্টক প্রভৃতি ছিল, যুধিষ্ঠিরের আদেশে ব্রাহ্মণগণ ভাগ ক’রে নিলেন। অবশিষ্ট দ্রব্য ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র ও ম্লেচ্ছগণকে দেওয়া হ’ল।
যজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে ব্রাহ্মণরা প্রভূত ধন নিয়ে চলে গেলেন। ব্যাসদেব তাঁর অংশ কুন্তীকে দিলেন। যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের সহিত যজ্ঞান্তস্নান ক’রে
- ↑ বহুবার বা বহুয়ারি।