পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫২
মহাভারত

সমাগত রাজগণকে বহু রত্ন হস্তী অশ্ব স্ত্রী বস্ত্র ও সুবর্ণ উপহার দিলেন এবং বভ্রুবাহনকেও বিপুল ধন দিলেন। রাজারা বিদায় নিয়ে চ’লে গেলেন। দুঃশলার বালক পৌত্রকে যুধিষ্ঠির সিন্ধুরাজ্যে অধিষ্ঠিত করলেন। কৃষ্ণ বলরাম প্রভৃতি বৃষ্ণিবংশীয় বীরগণ যথোচিত সৎকার লাভ ক’রে ধর্মরাজের আজ্ঞা নিয়ে দ্বারকায় প্রস্থান করলেন।

১২। শক্তুদাতা ব্রাহ্মণ—নকুলরূপী ধর্ম

 বৈশম্পায়ন জনমেজয়কে বললেন, মহারাজ, সেই মহাযজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে এক আশ্চর্য ব্যাপার ঘটেছিল। মহাদানের ফলে যখন ধর্মরাজের যশ সর্ব দিকে ঘোষিত হ’ল এবং আকাশ থেকে তাঁর উপর পুষ্পবৃষ্টি হ’তে লাগল তখন এক বৃহৎ নকুল যজ্ঞসভায় এল। তার চক্ষু নীল এবং পার্শ্বদেশ[১] স্বর্ণবর্ণ। সে ধৃষ্টভাবে বজ্রকণ্ঠে বললে, ওহে নরপতিগণ, কুরুক্ষেত্রবাসী এক উঞ্ছজীবী বদান্য ব্রাহ্মণ যে শক্তুদান করেছিলেন তার সঙ্গে আপনাদের এই যজ্ঞের তুলনা হয় না। নকুলের এই কথা শুনে ব্রাহ্মণরা বললেন, তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ? কেন এই যজ্ঞের নিন্দা করছ?

 নকুল হাস্য ক’রে বললে, দ্বিজগণ, আমি মিথ্যা বলি নি, দর্প ক’রেও বলি নি। ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে এক ব্রাহ্মণ কপোতের ন্যায় উঞ্ছবৃত্তি[২] দ্বারা জীবিকানির্বাহ করতেন। একদা দারুণ দুর্ভিক্ষের ফলে তাঁর সঞ্চয় শূন্য হয়ে গেলে তিনি অতি কষ্টে কিঞ্চিৎ যব সংগ্রহ ক’রে তা থেকে শক্তু প্রস্তুত করলেন। জপ আহ্নিক ও হোমের পর ব্রাহ্মণ সপরিবারে ভোজনের উপক্রম করছেন এমন সময়ে এক ক্ষুধার্ত অতিথি ব্রাহ্মণ এসে আহার চাইলেন। গৃহস্থ ব্রাহ্মণ অতিথিকে সাদরে পাদ্য অর্ঘ্য ও আসন দিয়ে নিজের শক্তুর ভাগ নিবেদন করলেন। অতিথি তা খেলেন, কিন্তু তাঁর ক্ষুধানিবৃত্তি হ’ল না। তখন ব্রাহ্মণের পত্নী বললেন, তুমি এঁকে আমার ভাগ দাও।

 ব্রাহ্মণ তাঁর ক্ষুধার্ত শ্রান্ত শীর্ণ বৃদ্ধা পত্নীকে বললেন, তোমার ভাগ আমি নিতে পারি না; কীট-পতঙ্গ-মৃগাদিও নিজের স্ত্রীকে পোষণ করে। ধর্ম অর্থ কাম সংসারকার্য সেবা সন্তানপালন সবই ভার্যার সাহায্যে হয়, ভার্যাকে

  1. পরে আছে—মস্তক।
  2. শান্তিপর্ব ২৪-পরিচ্ছেদ পাদটীকা দ্রষ্টব্য।