পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৪১

যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। রাজ্যের সকলেই এই গুণবান রাজকুমারের অনুরক্ত হলেন। চার বৎসর পরে শান্তনু একদিন যমুনাতীরবর্তী বনে বেড়াতে বেড়াতে অনির্বচনীয় সুগন্ধ অনুভব করলেন এবং তার অনুসরণ ক’রে দেবাঙ্গনার ন্যায় রূপবতী একটি কন্যার কাছে উপস্থিত হলেন। রাজার প্রশ্নের উত্তরে সেই কন্যা বললেন, আমি দাস[১] রাজের কন্যা, পিতার আজ্ঞায় নৌকাচালনা করি। শান্তনু দাসরাজের কাছে গিয়ে সেই কন্যা চাইলেন। দাসরাজ বললেন, আপনি যদি একে ধর্মপত্নী করেন এবং এই প্রতিশ্রুতি দেন যে এর গর্ভজাত পুত্রই আপনার পরে রাজা হবে তবে কন্যাদান করতে পারি।

 শান্তনু উত্তপ্রকার প্রতিশ্রুতি দিতে পারলেন না, তিনি সেই রূপবতী কন্যাকে ভাবতে ভাবতে রাজধানীতে ফিরে গেলেন। পিতাকে চিন্তান্বিত দেখে দেবব্রত বললেন, মহারাজ, রাজ্যের সর্বত্র কুশল, তথাপি আপনি চিন্তাকুল হযে আছেন কেন? আপনি আর অশ্বারোহণে বেড়াতে যান না, আপনার শরীর বিবর্ণ ও কৃশ হয়েছে, আপনার কি রোগ বলুন। শান্তনু বললেন, বৎস, আমার মহান্ বংশে তুমিই একমাত্র সন্তান, তুমি সর্বদা অস্ত্রচর্চা ক’রে থাক, কিন্তু মানুষ অনিত্য তোমার বিপদ ঘটলে আমার বংশলোপ হবে। তুমি শতপুত্রেরও অধিক সেজন্য আমি বংশবৃদ্ধির নিমিত্ত বৃথা পুনর্বার বিবাহ করতে ইচ্ছা করি না, তোমার মঙ্গল হ’ক এই কামনাই করি। কিন্তু বেদজ্ঞগণ বলেন, পুত্র না থাকা আর একটিমাত্র পুত্র দুই সমান। তোমার অবর্তমানে আমার বংশের কি হবে এই চিন্তাই আমার দুঃখের কারণ।

 বুদ্ধিমান দেবব্রত বৃদ্ধ অমাত্যের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, পিতার শোকের কারণ কি? অমাত্য জানালেন, রাজা দাসকন্যাকে বিবাহ করতে চান। দেবব্রত বৃদ্ধ ক্ষত্রিয়দের সঙ্গে নিয়ে দাসরাজের কাছে গেলেন এবং পিতার জন্য কন্যা প্রার্থনা করলেন। দাসরাজ সসম্মানে তাঁকে সংবর্ধনা ক’রে বললেন, এরপ শ্লাঘনীয় বিবাহসম্বন্ধ কে না চায়? যিনি আমার কন্যা সত্যবতীর জন্মদাতা, সেই উপরিচর রাজা বহুবার আমাকে বলেছেন যে শান্তনুই তার উপযুক্ত পতি। কিন্তু এই বিবাহে একটি দোষ আছে—বৈমাত্র ভ্রাতারূপে তুমি যার প্রতিদ্বন্দ্বী হবে সে কখনও সুখে থাকতে পারবে না।

 গাঙ্গেয় দেবব্রত বললেন, আমি সত্যপ্রতিজ্ঞা করছি শুনুন, এরূপ প্রতিজ্ঞা


  1. ধীবরজাতি বিশেষ।