পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্বমেধিকপৰ্ব
৬৫৩

পালন না করলে লোকে নরকে যায়। ব্রাহ্মণী শুনলেন না, নিজের শক্তু অতিথিকে দিলেন। অতিথি তা খেলেন, কিন্তু তথাপি তাঁর তৃপ্তি হ’ল না। তখন ব্রাহ্মণের পুত্র তাঁর অংশ দিতে চাইলেন। ব্রাহ্মণ বললেন, পুত্র, তোমার বয়স যদি সহস্র বৎসরও হয় তথাপি তুমি আমার দৃষ্টিতে বালক, তোমার অংশ আমি অতিথিকে দিতে পারব না। ব্রাহ্মণপুত্র আপত্তি শুনলেন না, নিজ অংশ অতিথিকে দিলেন। তথাপি তাঁর ক্ষুধা দূর হ’ল না। তখন ব্রাহ্মণের সাধ্বী পুত্রবধূ নিজ অংশ দিতে চাইলেন। ব্রাহ্মণ বললেন, কল্যাণী, তোমার দেহ শীর্ণ ও বিবর্ণ, তুমি ক্ষুধার্ত হয়ে আছ, তুমি অনাহারে থাকবে এ আমি কি ক’রে দেখব? পুত্রবধূ শুনলেন না, অগত্যা ব্রাহ্মণ তাঁর অংশও অতিথিকে দিলেন।

 তখন অতিথিরূপী ধর্ম বললেন, দ্বিজশ্রেষ্ঠ, তোমার শুদ্ধ দান পেয়ে আমি প্রীত হয়েছি; ওই দেখ, আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে, দেব গন্ধর্ব ঋষি প্রভৃতি তোমার দান দেখে বিস্মিত হয়ে স্তব করছেন। ক্ষুধায় প্রজ্ঞা ধৈর্য ও ধর্মজ্ঞান নষ্ট হয়, কিন্তু তুমি ক্ষুধা দমন এবং স্ত্রীপুত্রাদির স্নেহ অতিক্রম ক’রে নিজ কর্ম দ্বারা স্বর্গলোক জয় করেছ। শক্তুদান ক’রে তুমি যে ফল পেয়েছ বহু শত অশ্বমেধেও তা হয় না। দিব্য যান উপস্থিত হয়েছে, তুমি এতে আরোহণ ক’রে পত্নী পুত্র ও পুত্রবধূর সহিত ব্রহ্মলোকে যাও।

 অতিথিরাপী ধর্ম এইরূপ বললে ব্রাহ্মণ সপরিবারে স্বর্গে গেলেন। তখন আমি গর্ত থেকে নির্গত হয়ে ভূলুণ্ঠিত হলাম। সিক্ত শক্তুকণার গন্ধে, দিব্য পুষ্পের মর্দনে এবং সেই সাধু ব্রাহ্মণের দান ও তপস্যার প্রভাবে আমার মস্তক কাঞ্চনময় হ’ল। আমার অবশিষ্ট দেহও ওইরূপ হবে এই আকাঙ্ক্ষায় আমি তপোবন ও যজ্ঞস্থলে সর্বদা ভ্রমণ করছি। আমি আশান্বিত হয়ে কুরুরাজের এই যজ্ঞে এসেছি, কিন্তু আমার দেহ কাঞ্চনময় হ’ল না। এই কারণেই আমি হাস্য ক’রে বলেছিলাম যে সেই উঞ্ছজীবী ব্রাহ্মণের শক্তুদানের সঙ্গে আপনাদের এই যজ্ঞের তুলনা হয় না। নকুল এই কথা বলে চ’লে গেল। সে অদৃশ্য হ’লে দ্বিজগণ নিজ নিজ গৃহে প্রস্থান করলেন।


 জনমেজয় বললেন, মহর্ষি, আমি মনে করি যজ্ঞের তুল্য পুণ্যফলদায়ক কিছুই নেই; নকুল ইন্দ্রতুল্য রাজা যুধিষ্ঠিরের নিন্দা করলে কেন? বৈশম্পায়ন বললেন, একদা মহর্ষি জমদগ্নি শ্রাদ্ধের জন্য হোমধেনু দোহন ক’রে একটি পবিত্র নূতন ভাণ্ডে দুগ্ধ রেখেছিলেন। সেই সময়ে মহর্ষিকে পরীক্ষা করবার ইচ্ছায়