পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আশ্রমবাসিকপর্ব

॥ আশ্রমবাসপর্বাধ্যায়॥

১। যুধিষ্ঠিরের উদারতা

 যুদ্ধজয়ের পর পাণ্ডবগণ ছত্রিশ বৎসর রাজ্যপালন করেছিলেন। প্রথম পনর বৎসর তাঁরা ধৃতরাষ্ট্রের সম্মতি নিয়ে সকল কার্য করতেন। বিদুর সঞ্জয় যুযুৎসু ও কৃপাচার্য ধৃতরাষ্ট্রের নিকটে থাকতেন, ব্যাসদেব সর্বদা বৃদ্ধ কুরুরাজকে দেবতা ঋষি পিতৃগণ ও রাক্ষস প্রভৃতির কথা শোনাতেন। বিদুর ধর্ম ও ব্যবহার (আইন) বিষয়ক কার্য দেখতে লাগলেন। তাঁর সুনীতির ফলে সামন্ত রাজাদের কাছ থেকে অল্প ব্যয়ে নানাবিধ অভীষ্ট কার্য আদায় হ’ত। তিনি কারারুদ্ধ বা বধদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে মুক্তি দিলে যধিষ্ঠির কোনও আপত্তি করতেন না। কুন্তী দ্রৌপদী সুভদ্রা উলূপী চিত্রাঙ্গদা, ধৃষ্টকেতুর ভগিনী[১], জরাসন্ধের কন্যা[২] প্রভৃতি সর্বদা গান্ধারীর সেবা করতেন। ধর্মরাজ তাঁর ভ্রাতাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, পুত্রহীন ধৃতরাষ্ট্র যেন কোনও দুঃখ না পান। সকলেই এই আজ্ঞা পালন করতেন, কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের দুর্বদ্ধির ফলে পূর্বে যা ঘটেছিল ভীম তা ভুলতে পারলেন না।

 যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতা ও অমাত্যগণকে বললেন, বৃদ্ধ কুরুরাজ আমাদের সকলেরই মাননীয়; যিনি তাঁর আজ্ঞা পালন করবেন তিনি আমার সুহৃৎ, যিনি করবেন না তিনি আমার শত্রু। ইনি আমাদের জন্যই পুত্রপৌত্রাদির শোকে কাতর হয়ে আছেন, অতএব এঁর সকল অভিলাষ পূর্ণ করা আমাদের কর্তব্য। মৃত আত্মীয়সুহৃদ্‌গণের শ্রাদ্ধাদির জন্য এঁর যা আবশ্যক সবই যেন ইনি পান।

 যুধিষ্ঠিরের আচরণে ধৃতরাষ্ট্র অতিশয় তুষ্ট হলেন, গান্ধারীও পুত্রশোক ত্যাগ ক’রে পাণ্ডবগণকে নিজপুত্রতুল্য মনে করতে লাগলেন। ধৃতরাষ্ট্র প্রতিদিন প্রাতঃকালে পাণ্ডবগণের মঙ্গলের নিমিত্ত স্বস্ত্যয়ন ও হোম করাতে লাগলেন।

  1. নকুলপত্নী করেণুমতী।
  2. সহদেবপত্নী।