পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫৬
মহাভারত

তিনি পাণ্ডুপাত্রদের সেবায় যে আনন্দ পেলেন তা পূর্বে নিজের পুত্রদের কাছে পান নি।

২। ভীমের আক্রোশ—ধৃতরাষ্ট্রের সংকল্প

 এইরূপে পনর বৎসর কেটে গেল। ভীম অপ্রকাশ্যভাবে ধৃতরাষ্ট্রের অপ্রিয় কার্য করতেন এবং অনুচর দ্বারা তাঁর আজ্ঞা লঙ্ঘন করাতেন। একদিন ভীম তাঁর বন্ধুদের কাছে তাল ঠুকে বললেন, আমার এই চন্দনচর্চিত পরিঘতুল্য বাহুর প্রতাপেই মূঢ় দুর্যোধনাদি পুত্র ও বান্ধব সহ নিহত হয়েছে। এই নিষ্ঠুর বাক্য শুনতে পেয়ে ধৃতরাষ্ট্র অত্যন্ত ব্যথিত হলেন, বুদ্ধিমতী গান্ধারী কালধর্ম বুঝে নীরবে রইলেন। যুধিষ্ঠির অর্জুন নকুল সহদেব কুন্তী ও দ্রৌপদী এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেন নি। ধৃতরাষ্ট্র বাষ্পাকুলকণ্ঠে তাঁর সুহৃদ্‌গণকে বললেন, আমার দুর্বদ্ধির ফলেই কুরুকুল ক্ষয় পেয়েছে। পুত্রস্নেহের বশে আমি ব্যাসদেব কৃষ্ণ ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ বিদুর সঞ্জয় ও গান্ধারীর উপদেশ শুনি নি, পাণ্ডবগণকে তাদের পিতৃরাজ্য ফিরিয়ে দিই নি। এই অপরাধ সহস্র শল্যের ন্যায় আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হয়ে আছে। এখন আমার পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য আমি দিনের চতুর্থ ভাগে বা অষ্টম ভাগে যৎকিঞ্চিৎ আহার করি, গান্ধারী ভিন্ন আর কেউ তা জানেন না। আমি ও গান্ধারী মৃগচম প’রে কুশশয্যায় শুয়ে নিত্য জপ করি। যুধিষ্ঠির শুনলে অনুতপ্ত হবেন সেজন্য এ কথা আমি কাকেও জানাই নি।

 তার পর ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে বললেন, বৎস, তোমার আশ্রয়ে প্রতিপালিত হয়ে আমি সুখে আছি, দান ও শ্রাদ্ধকর্মাদি ক’রে পুণ্যসঞ্চয়ও করেছি; পুত্রহীনা গান্ধারীও আমাকে দেখে ধৈর্যধারণ করেছেন। যে নৃশংসগণ দ্রৌপদীর অপমান ও তোমাদের ঐশ্বর্ষহরণ করেছিল তারা ক্ষত্রধর্মানুসারে যুদ্ধে হত হয়ে স্বর্গে গেছে। এখন আমার ও গান্ধারীর পক্ষে যা শ্রেয় তাই আমার করা উচিত। তুমি ধর্মনিষ্ঠ সেজন্য তোমাকে বলছি, গান্ধারী ও আমাকে বনগমনের অনুমতি দাও। বৃদ্ধ বয়সে পুত্রকে রাজ্য দিয়ে বনে বাস করাই আমাদের কুলোচিত ধর্ম। আমি গান্ধারীর সঙ্গে বনবাসী হয়ে তোমাকে আশীর্বাদ করব, চীরবল্কল ধারণ ক’রে উপবাসী হয়ে তপস্যা করব। সেই তপস্যার ফল তুমিও পাবে, কারণ, রাজার অধিকারে শুভাশুভ যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয় রাজাও তার ফলভোগী হন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, কুরুরাজ, আপনি দুঃখভোগ করলে এই রাজ্য আমার