পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্রমবাসিকপৰ্ব
৬৫৭

প্রীতিকর হবে না। আমাকে ধিক, আমি অতি দুর্বুদ্ধি রাজ্যাসক্ত ও প্রমাদগ্রস্ত। আপনি অসুখী হ’লে আমার রাজ্যভোগে কি প্রয়োজন? আপনি আমাদের পিতা ও পরম গুরু, আপনি চ’লে গেলে আমরা কোথায় থাকব? আপনার ঔরসপুত্র যুযুৎসু বা আপনার মনোনীত অন্য কেউ এই রাজ্য গ্রহণ করুন, আমিই বনে যাব। অথবা আপনি স্বয়ং রাজ্যশাসন করুন, অযশ দ্বারা আমাকে দগ্ধ করবেন না। আমি রাজা নই, আপনিই রাজা। দুর্যোধনাদির কার্যের জন্য আমার মনে কিছুমাত্র ক্রোধ নেই, দৈববশেই আমরা সকলে মোহগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমরাও আপনার পুত্র, গান্ধারী ও কুন্তীকে সমান জ্ঞান করি। আমি নতশিরে প্রার্থনা করছি, আপনি মনের দুঃখ দূর করুন।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, বৎস, আমি বনে গিয়ে তপস্যা করতে ইচ্ছা করি। তুমি আমার যথোচিত সেবা করেছ, এখন বনগমনের অনুমতি দাও। ধৃতরাষ্ট্র সহসা কম্পিতদেহে কৃতাঞ্জলিপুটে বললেন, বার্ধক্য ও অধিক কথা বলার ফলে আমার মন অবসন্ন ও মুখ শুষ্ক হচ্ছে, আমি সঞ্জয় আর কৃপাচার্যকে বলছি, এঁরা আমার হয়ে ধর্মরাজকে অনুনয় করুন। এই ব’লে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর দেহে ভর দিয়ে সংজ্ঞাহীন হলেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, হায়, যিনি শত সহস্র হস্তীর ন্যায় বলশালী, যিনি লৌহভীম চূর্ণ করেছিলেন, তিনি এখন অচেতন হয়ে অবলা স্ত্রীকে অবলম্বন করলেন! এইরূপ বিলাপ ক’রে যুধিষ্ঠির জলার্দ্র হস্ত দিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের মুখ ও বক্ষ মুছিয়ে দিলেন। সংজ্ঞালাভ ক’রে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, বৎস, আমাকে আলিঙ্গন কর, তোমার স্পর্শে আমি পুনর্জীবিত হয়েছি। আজ আমি দিবসের অষ্টম ভাগে আহার করব এই স্থির করেছিলাম, এখন তার সময় হয়েছে; দুর্বলতার ফলে আমার চেতনা লুপ্ত হয়েছিল। বার বার কথা বললে আমার ক্লান্তি হয়; তুমি আর কষ্ট দিও না, আমাকে বনগমনের অনুমতি দাও।

 যুধিষ্ঠির বললেন, কুরুরাজ, আপনাকে প্রীত করার জন্য আমি রাজ্য বা জীবনও ত্যাগ করতে পারি। আপনি এখন আহার করুন, বনগমনের কথা পরে হবে।

৩। ধৃতরাষ্ট্রের প্রজাসম্ভাষণ

 ব্যাসদের এসে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, কুরুনন্দন ধৃতরাষ্ট্র যা বলছেন তাতে তুমি সম্মত হও, আর বিচারের প্রয়োজন নেই। ইনি বৃদ্ধ ও পুত্রশোকাতুর,