পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্রমবাসিকপর্ব
৬৬১

সহদেবের উপর কখনও অপ্রসন্ন হয়ো না, সে তোমার ও আমার অনুরক্ত। কর্ণকে সর্বদা স্মরণ ক’রো, তাঁর উদ্দেশে দান ক’রো, সর্বদা সকলে দ্রৌপদীর প্রিয়সাধন ক’রো। কুরুকুলের ভার তোমার উপরেই পড়েছে।

 যুধিষ্ঠির কাতর হয়ে কুন্তীকে নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করলেন। ভীম বললেন, আমাদের ত্যাগ ক’রে বনে যাওয়াই যদি আপনার ইচ্ছা ছিল তবে আমাদের দিয়ে লোকক্ষয় করালেন কেন? কুন্তী পুত্রদের অনুনয় শুনলেন না, অশ্রুরোধ করে বললেন, তোমরা পাণ্ডুর পুত্র এবং দেবতুল্য পরাক্রমশালী; জ্ঞাতির হস্তে নির্জিত হয়ে যাতে তোমাদের দুঃখভোগ করতে না হয় সেজন্যই আমি তোমাদের যুদ্ধে উৎসাহিত করেছিলাম, তোমাদের তেজোবৃদ্ধির নিমিত্ত বাসুদেবের নিকট বিদুলার উপাখ্যান বলেছিলাম। স্বামীর রাজত্বকালে আমি বহু সুখ ভোগ করেছি, এখন পুত্রের বিজিত রাজ্য ভোগ করতে চাই না। আমার পতি যেখানে আছেন সেই পূণ্যলোকে আমি যেতে ইচ্ছা করি; ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর সেবা এবং তপস্যা ক’রে শরীর শুষ্ক করব। কুরুশ্রেষ্ঠ, ভীমসেন প্রভৃতির সহিত গৃহে ফিরে যাও, তোমার ধর্মে মতি থাকুক, মন মহৎ হ’ক।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, যুধিষ্ঠিরের জননী ফিরে যান, পুত্র ও ঐশ্বর্য ত্যাগ ক’রে ইনি কেন দুর্গম বনে যাবেন? রাজ্যে থেকেই ইনি দান ব্রত ও তপস্যা করুন। গান্ধারী, তুমি এঁকে নিবৃত্ত হ’তে বল। ধর্মপরায়ণা সতী কুন্তী বনগমনের সংকল্প ত্যাগ করলেন না; তখন দ্রৌপদী প্রভৃতি বধূগণ সরোদনে পাণ্ডবদের সঙ্গে হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন।

৫। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে নারদাদি

 বহু দূরে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্র ভাগীরথীতীরে উপস্থিত হলেন। সন্ধ্যাকালে সূর্যের আরাধনার পর বিদুর ও সঞ্জয় কুশশয্যা প্রস্তুত ক’রে দিলেন; ধৃতরাষ্ট্র এক শয্যায় এবং কুন্তীর সহিত গান্ধারী অন্য শয্যায় রাত্রিযাপন করলেন। প্রাতঃকালে যথাবিধি আহ্যিক ও হোমের পর তাঁরা উত্তর দিকে যাত্রা করলেন এবং কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে রাজর্ষি শতযূপকে দেখতে পেলেন। ইনি কেকয় দেশের রাজা ছিলেন, বৃদ্ধাবস্থায় জ্যেষ্ঠপুত্রকে রাজ্য দিয়ে বনবাসী হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্র ব্যাসের আশ্রমে গিয়ে দীক্ষা নিলেন এবং জটা অজিন ও বল্কল ধারণ ক’রে শতযূপের আশ্রমে বিদুর সঞ্জয় গান্ধারী ও কুন্তীর সহিত কঠোর তপস্যায় নিরত হলেন।