পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬২
মহাভারত

 একদিন নারদ পর্বত ব্যাস প্রভৃতি ধৃতরাষ্ট্রকে দেখতে এলেন। কথাপ্রসঙ্গে নারদ বললেন, শতযূপের পিতামহ সহস্রচিত্য তপস্যার ফলে ইন্দ্রলোক লাভ করেছেন। আরও অনেক রাজা এই বনে তপঃসিদ্ধ হয়ে স্বর্গে গেছেন। ধৃতরাষ্ট্র, আপনিও ব্যাসের অনুগ্রহে গান্ধারীর সহিত উত্তম গতি লাভ করবেন। রাজা পাণ্ডু ইন্দ্রলোকে বাস ক’রে নিত্য আপনাকে স্মরণ করেন; আমরা দিব্যনেত্রে দেখছি, সৎকর্মের ফলে কুন্তীও তাঁর কাছে যাবেন। বিদুর যুধিষ্ঠিরে প্রবেশ করবেন, সঞ্জয় স্বর্গে যাবেন।

 রাজর্ষি শতযূপ বললেন, দেবর্ষি, ধৃতরাষ্ট্র কোন্ লোকে যাবেন তা তো আপনি বললেন না। নারদ বললেন, আমি ইন্দ্রের কাছে শুনেছি রাজা ধৃতরাষ্ট্র আর তিন বৎসর জীবিত থাকবেন, তার পর গান্ধারীর সহিত দিব্য বিমানে কুবেরভবনে গিয়ে ইচ্ছানুসারে দেব গন্ধর্ব ও রাক্ষসলোকে বিচরণ করবেন। ধৃতরাষ্ট্রকে এইরূপে আশ্বাসিত ক’রে নারদাদি প্রস্থান করলেন।

৬। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে যুধিষ্ঠিরাদি

 ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতি বনে গেলে পুরবাসিগণ শোকার্ত হয়ে বলতে লাগলেন, পুত্রহীন বৃদ্ধ কুরুরাজ এবং মহাভাগা গান্ধারী ও কুন্তী নির্জন বনে কি ক’রে বাস করছেন? পুত্রগণ ও রাজশ্রী ত্যাগ ক’রে কুন্তী কেন দুষ্কর তপস্যা করতে গেলেন?

 কুন্তীর বিরহে পাণ্ডবগণ কাতর হয়ে কালযাপন করতে লাগলেন, কোনও বিষয়ে তাঁরা মন দিতে পারলেন না। কয়েক দিন পরে তাঁরা স্থির করলেন যে বনে গিয়ে সকলকে দেখে আসবেন, দ্রৌপদীও গমনের জন্য উৎসুক হলেন। যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় রথ হস্তী অশ্ব ও সৈন্য সজ্জিত হ’ল, বহু পুরবাসী তাঁর সঙ্গে যাবার জন্য প্রস্তুত হ’ল। পাঁচ দিন নগরের বহির্ভাগে বাস ক’রে ষষ্ঠ দিনে যুধিষ্ঠির সদলে যাত্রা করলেন। কৃপাচার্য সৈন্যদলের নেতা হয়ে চললেন; যুধিষ্ঠির ও অর্জুন রথে, ভীম হস্তীতে, নকুল-সহদেব অশ্বে, এবং দ্রৌপদী প্রভৃতি নারীগণ শিবিকায় যাত্রা করলেন। নগর ও গ্রামবাসী প্রজাগণ বিবিধ যানে যুধিষ্ঠিরের অননুগমন করলেন। যুযুৎসু ও ধৌম্য পউররক্ষার জন্য হস্তিনাপুরে রইলেন।

 পাণ্ডবগণ যমুনা পার হয়ে কুরুক্ষেত্রে এসে শতযূপ ও ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রম দেখতে পেলেন এবং যান থেকে নেমে বিনীতভাবে পদব্রজে আশ্রমে প্রবেশ করলেন। যুধিষ্ঠির সজলনয়নে তাপসগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের জ্যেষ্ঠতাত কুরুবংশপতি কোথায়? তাঁরা বললেন, মহারাজ, তিনি পুষ্প ও জল আনতে এবং যমুনায়