পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্রমবাসিকপর্ব
৬৬৩

স্নান করতে গেছেন। পাণ্ডবগণ সত্বর যমুনার দিকে চললেন এবং কিছুদূর গিয়ে দেখলেন, গান্ধারী ও ধৃতরাষ্ট্রকে নিয়ে কুন্তী আগে আগে আসছেন। সহদেব উচ্চস্বরে রোদন ক’রে কুন্তীর পায়ে পড়লেন। তার পর পাণ্ডবগণ ধৃতরাষ্ট্রাদিকে প্রণাম ক’রে তাঁদের জলপূর্ণ কলস বয়ে নিয়ে আশ্রমের দিকে চললেন।

 নানা স্থান থেকে তাপসগণ পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী প্রভৃতিকে দেখতে এলেন। সঞ্জয় এইপ্রকারে তাঁদের পরিচয় দিলেন।—যাঁর দেহ বিশুদ্ধ স্বর্ণের ন্যায় গৌরবর্ণ, মহাসিংহের ন্যায় সবল, যাঁর নাসিকা উন্নত এবং চক্ষু দীর্ঘ ও তাম্রবর্ণ, ইনি কুরুরাজ যুধিষ্ঠির। এই মত্তগজেন্দ্রগামী তপ্তকাঞ্চনবর্ণ দীর্ঘবাহু স্থূলস্কন্ধ পুরুষ বৃকোদর। এঁর পার্শ্বে যে মহাধনুর্ধর শ্যামবর্ণ আয়তলোচন হস্তিযূথপতিতুল্য যুবা রয়েছেন, ইনি অর্জুন। কুন্তীর নিকটে বিষ্ণু ও মহেন্দ্রের ন্যায় অনুপম রূপবান ও বলবান যে দুজন রয়েছেন, এঁরা নকুল-সহদেব। এই নীলোৎপলবর্ণা মধ্যবয়স্কা পদ্মপলাশাক্ষী মূর্তিমতী লক্ষ্মীর ন্যায় নারী কৃষ্ণা। এঁর পার্শ্বে যে কনকবর্ণা চন্দ্রপ্রভার ন্যায় রূপবতী রমণী রয়েছেন ইনি চক্রপাণি কৃষ্ণের ভগিনী সুভদ্রা; এই সুবর্ণগৌরাঙ্গী নাগকন্যা উলূপী, এবং আর্দ্র মধূক পুষ্পের ন্যায় যাঁর কান্তি, ইনি রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা; এঁরা অর্জুনের ভার্যা। যিনি কৃষ্ণের সহিত স্পর্ধা করতেন সেই রাজসেনাপতি শল্যের ভগিনী এই নীলোৎপলবর্ণা রমণী ভীমসেনের পত্নী (কালী)। এই চম্পকগৌরী জরাসন্ধকন্যা সহদেবের পত্নী। এঁর নিকটে যে ইন্দীবরশ্যামবর্ণা রমণী ভূমিতে ব’সে আছেন, ইনি নকুলের পত্নী (ধৃষ্টকেতুর ভগিনী করেণুমতী)। এই প্রতপ্তকাঞ্চনবর্ণা সুন্দরী যিনি পুত্রকে কোলে নিয়ে আছেন, ইনি বিরাটকন্যা উত্তরা; দ্রোণ প্রভৃতি এঁর পতি অভিমন্যুকে রথহীন অবস্থায় বধ করেছিলেন। এই এক শত নারী, যাঁরা শুক্ল উত্তরীয় ধারণ ক’রে আছেন, যাঁদের সীমন্তে অলংকার নেই, এঁরা ধৃতরাষ্ট্রের অনাথা পুত্রবধূ।

৭। বিদুরের তিরোধান

 তাপসগণ চ’লে গেলে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরাদির কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। কিছুক্ষণ আলাপের পর যুধিষ্ঠির বললেন, মহারাজ, বিদুর কোথায়? তাঁকে দেখছি না। সঞ্জয় তপস্যায় নিরত থেকে কুশলে আছেন তো? ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পুত্র, বিদুর কেবল বায়ু ভক্ষণ ক’রে ঘোর তপস্যা করছেন, তাঁর শীর্ণ দেহ শিরায়