পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্রমবাসিকপর্ব
৬৬৫

॥ পুত্রদর্শনপর্বাধ্যায়॥

৮। মৃত যোদ্ধৃগণের সমাগম

 পাণ্ডবগণ ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রমে সুখে বাস করতে লাগলেন। এক মাস পরে ব্যাসদেব পুনর্বার এলেন, সেই সময়ে মহর্ষি নারদ পর্বত ও দেবল, এবং গন্ধর্ব বিশ্বাবসু তুম্বুরু ও চিত্রসেনও উপস্থিত হলেন। নানাপ্রকার ধর্মকথার পর ব্যাস ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, রাজেন্দ্র, তোমার মনোভাব আমি জানি, তুমি এবং গান্ধারী কুন্তী দ্রৌপদী সুভদ্রা প্রভৃতি পুত্রবিয়োগের তীব্র শোক ভোগ করছ। তোমার কি কামনা বল, তপস্যার প্রভাবে আমি তা পূর্ণ করব।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আপনার ও এই সাধুগণের সমাগমে আমি ধন্য হয়েছি, আমার জীবন সফল হয়েছে। আমার আর পরলোকের ভয় নেই, কিন্তু যার দুর্নীতির ফলে পাণ্ডবগণ নির্যাতিত এবং বহু নরপতি বিনাশিত হয়েছেন সেই দুর্বুদ্ধি হতভাগ্য দুর্যোধনের জন্য আমার হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে। পিতা, আমি শান্তি পাচ্ছি না। গান্ধারী কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁর শ্বশুর ব্যাসকে বললেন, মুনিপুংগব, ষোড়শ বৎসর গত হয়েছে তথাপি কুরুরাজের পুত্রশোক শান্ত হচ্ছে না। আপনি তপোবলে নানা লোক সৃষ্টি করতে পারেন, আমাদের পরলোকগত পুত্রগণকে কি দেখাতে পারেন না? আমাদের এই প্রিয়তমা পুত্রবধূ, দ্রৌপদী, কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রা, ভূরিশ্রবার এই ভার্যা, আপনার যে শত পৌত্র যুদ্ধে নিহত হয়েছে তাদের পত্নীগণ—এঁদের শোকের জন্য অন্ধরাজ ও আমার শোক বার বার বর্ধিত হচ্ছে। এমন উপায় করুন যাতে আমরা এবং আপনার এই পত্রবধূ কুন্তী শোকশূন্য হ’তে পারি।

 গান্ধারী এইরূপ বললে কুন্তী তাঁর প্রচ্ছন্নজাত পুত্র কর্ণকে স্মরণ করলেন। তাঁর ভাবান্তর দেখে ব্যাস বললেন, তোমার মনে যা আছে তা বল। কুন্তী লজ্জিতভাবে বললেন, ভগবান, আপনি আমার শ্বশুর, দেবতার দেবতা; আমি সত্য কথা বলছি শুনুন। তার পর কুন্তী কর্ণের জন্মবৃত্তান্ত বিবৃত ক’রে বললেন, আমি মূঢ়তার বশে সজ্ঞানে সেই পুত্রকে উপেক্ষা করেছি, তার ফলে আমার হৃদয় দগ্ধ হচ্ছে। আমার কর্ম পাপজনক বা পাপশূন্য যাই হ’ক আপনাকে জানালাম। সেই পুত্রকে আমি দেখতে ইচ্ছা করি; মুনিশ্রেষ্ঠ, আমার হৃদয়ের কামনা আজ পূর্ণ করুন।

 ব্যাস বললেন, তোমার কামনা পূর্ণ হবে। তোমার অপরাধ হয় নি; দেবতারা ঐশ্বর্যবান, তাঁরা সংকল্প বাক্য দৃষ্টি স্পর্শ বা সংগম—এই পাঁচ প্রকারে পুত্র