পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আশ্রমবাসিকপর্ব
৬৬৭

 রাত্রি প্রভাত হ’লে ব্যাসদেব সেই মৃতোত্থিত যোদ্ধৃগণকে প্রস্থানের অনুমতি দিলেন। ক্ষণমধ্যে তাঁরা রথ ও ধ্বজ সহ গঙ্গাগর্ভে প্রবেশ ক’রে নিজ নিজ লোকে ফিরে গেলেন। পতিহীনা ক্ষত্রিয় নারীগণকে ব্যাস বললেন, যাঁরা পতিলোকে যেতে চান তাঁরা শীঘ্র জাহ্নবীর জলে অবগাহন করুন। তখন সাধ্বী বরাঙ্গনাগণ ধৃতরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে জলে প্রবেশ করলেন এবং দেহ ত্যাগ ক’রে পতির সহিত মিলিত হলেন।

 যিনি এই প্রিয়সমাগমের বিবরণ শোনেন তিনি ইহলোকে ও পরলোকে প্রিয় বিষয় লাভ করেন। যিনি অপরকে শোনান তিনি ইহলোকে যশ এবং পরলোকে শুভগতি লাভ করেন। যে বেদজ্ঞ সাধু মানব শুচিভাবে শ্রদ্ধাসহকারে এই আশ্চর্য পর্ব শোনেন তিনি পরমগতি প্রাপ্ত হন।

৯। জনমেজয়ের যজ্ঞে পরীক্ষিৎ—পাণ্ডবগণের প্রস্থান

 জনমেজয় তাঁর পূর্বপুরুষদের এই পুনরাগমনের বিবরণ শুনে বললেন, যাঁরা দেহ ত্যাগ করেছেন তাঁদের দর্শনলাভ কি করে সম্ভবপর হ’ল? ব্যাসশিষ্য বৈশম্পায়ন উত্তর দিলেন, মহারাজ, মানুষের কর্ম থেকেই শরীর উৎপন্ন হয়। শরীরের উপাদান মহাভূতসমূহ, ভূতাধিপতি মহেশ্বরের অধিষ্ঠানের ফলে দেহ নষ্ট হ’লেও মহাভূত নষ্ট হয় না, জীবাত্মা মহাভূতকে ত্যাগ করেন না, মহাভূত আশ্রয় ক’রে তিনি পূর্বরূপে প্রকাশিত হ’তে পারেন।

 তার পর বৈশম্পায়ন বললেন, জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র পূর্বে তাঁর পুত্রদের কখনও দেখেন নি, ব্যাসদেবের প্রসাদেই তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। জনমেজয় বললেন, বরদাতা ব্যাসদেব যদি আমার পিতাকে দেখান তবে আপনার বাক্যে আমার শ্রদ্ধা হবে, আমি প্রীত ও কৃতার্থ হব। ব্যাসের প্রসাদে আমার অভিলাষ পূর্ণ হ’ক। জনমেজয় এইরূপ বললে ব্যাসের তপস্যার প্রভাবে পরীক্ষিৎ তাঁর পূর্বের বয়সে ও রূপে অমাত্যগণ সহ আবির্ভূত হলেন, তাঁর সঙ্গে মহাত্মা শমীক[১] ও শৃঙ্গীও এলেন।

 জনমেজয় অতিশয় আনন্দিত হলেন এবং যজ্ঞসমাপন ও যজ্ঞান্তস্নানের পর জরৎকারুপুত্র আস্তীককে বললেন, আমার এই যজ্ঞ অতি আশ্চর্য; আমি পিতার

  1. আদিপর্ব ৮-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।