পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬৮
মহাভারত

দর্শন পেয়েছি, তাঁর আগমনে আমার শোক দূর হয়েছে। আস্তীক বললেন, মহারাজ, যাঁর যজ্ঞে মহর্ষি দ্বৈপায়ন উপস্থিত থাকেন তিনি ইহলোক ও পরলোক জয় করেছেন। পাণ্ডুর বংশধর, তুমি বিচিত্র আখ্যান শুনেছ, পিতাকে দেখেছ, সর্পসকল ভস্মসাৎ হয়েছে, তোমার সত্যবাক্যের ফলে তক্ষকও মুক্তিলাভ করেছেন। তুমি ঋষিদের পূজা করেছ, সাধুজনের সহিত মিলিত হয়েছ, এবং পাপনাশক মহাভারত শুনেছ; এর ফলে তোমার বিপুল ধর্ম লাভ হয়েছে।

 বৈশম্পায়ন বলতে লাগলেন।—সকলে গঙ্গাতীর হ’তে আশ্রমে ফিরে এলে ব্যাসদেব ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, তুমি ধর্মজ্ঞ ঋষিদের মুখে বিবিধ উপদেশ শুনেছ, শুভগতিপ্রাপ্ত পুত্রগণকেও দেখেছ। এখন শোক ত্যাগ কর, যুধিষ্ঠিরকে ভ্রাতাদের সঙ্গে রাজ্যে ফিরে যেতে বল; এঁরা মাসাধিক কাল এখানে রয়েছেন। ব্যাসের বাক্য শুনে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে বললেন, অজাতশত্রু, তোমার মঙ্গল হ’ক, তোমরা এখন হস্তিনাপুরে ফিরে যাও, তোমরা এখানে থাকায় স্নেহের জন্য আমার তপস্যার ব্যাঘাত হচ্ছে। তুমি আমার পুত্রের কার্য করেছ, আমাদের পিণ্ড কীর্তি ও কুল তোমাতেই প্রতিষ্ঠিত আছে। আর আমার শোক নেই, জীবনেরও প্রয়োজন নেই, এখন কঠোর তপস্যা করব। তুমি আজ বা কাল চ’লে যাও।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আমি এই আশ্রমে থেকে আপনার সেবা করব। সহদেব বললেন, আমি মাতা কুন্তীকে ছেড়ে যেতে পারব না। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তী বহু প্রবোধ দিয়ে তাঁদের নিরস্ত করলেন। তখন পাণ্ডবগণ বিদায় নিয়ে ভার্যা বান্ধব ও সৈন্য সহ হস্তিনাপুরে প্রস্থান করলেন।


॥ নারদাগমনপর্বাধ্যায়॥

১০। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তীর মৃত্যু

 পাণ্ডবগণ হস্তিনাপুরে ফিরে যাবার দু বৎসর পরে একদিন দেবর্ষি নারদ যুধিষ্ঠিরের কাছে এলেন। তিনি আসন গ্রহণ ক’রে কথাপ্রসঙ্গে বললেন, আমি গঙ্গা ও অন্যান্য তীর্থ ভ্রমণ ক’রে তোমাকে দেখতে এসেছি। যুধিষ্ঠির বললেন, ভগবান, যদি আমার পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে দেখে থাকেন তবে তিনি কেমন আছেন বলুন।