নারদ বললেন, তোমরা আশ্রম থেকে চ’লে এলে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী ও সঞ্জয় গঙ্গাদ্বারে গেলেন, অগ্নিহোত্র সহ পুরোহিতও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে ধৃতরাষ্ট্র মুখে বীটা[১] দিয়ে মৌনী ও বায়ুভূক হয়ে কঠোর তপস্যায় রত হলেন, তাঁর দেহ অস্থিচর্মসার হয়ে গেল। গান্ধারী কেবল জলপান ক’রে, কুন্তী এক মাস অন্তর এবং সঞ্জয় পাঁচ দিন অন্তর আহার ক’রে জীবনধারণ করলেন। তাঁদের যাজকগণ যথাবিধি অগ্নিতে আহুতি দিতে লাগলেন। ছ মাস পরে তাঁরা অরণ্যে গেলেন। সেই সময়ে চতুর্দিকে দাবানল ব্যাপ্ত হ’ল, বৃক্ষ ও পশু সকল দগ্ধ হয়ে গেল। ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতি অনাহারের ফলে অত্যন্ত দুর্বল হয়েছিলেন, সেজন্য পালাতে পারলেন না। তখন ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে বললেন, তুমি পালিয়ে আত্মরক্ষা কর, আমরা এই অগ্নিতে প্রাণত্যাগ ক’রে পরমগতি লাভ করব। সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, এই বৃথাগ্নিতে প্রাণত্যাগ করলে আপনার অনিষ্ট হবে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমরা গৃহ ত্যাগ ক’রে এসেছি, এখন মরলে অনিষ্ট হবে না, জল বায়ু অগ্নি বা অনশন দ্বারা প্রাণত্যাগই তাপসদের পক্ষে প্রশস্ত; সঞ্জয়, তুমি চ’লে যাও। এই ব’লে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তীর সহিত পূর্বাস্য হয়ে উপবেশন করলেন, সমাধিস্থ হওয়ায় তাঁদের দেহ কাষ্ঠের ন্যায় নিশ্চল হ’ল। এই অবস্থায় তাঁরা দাবানলে আক্রান্ত হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন। সঞ্জয় গঙ্গাতীরের মহর্ষিগণকে সকল বৃত্তান্ত জানিয়ে হিমালয়ে চ’লে গেলেন।
তার পর নারদ বললেন, আমি গঙ্গাতীরে তাপসদের নিকটে ছিলাম, সঞ্জয়ের কথা শুনে তোমাদের জানাতে এসেছি। আমি ধতরাষ্ট্রাদির দেহ দেখেছি। তাঁরা স্বেচ্ছায় প্রাণত্যাগ করেছেন, সদ্গতিও পেয়েছেন, তাঁদের জন্য শোক করা উচিত নয়।
পাণ্ডবগণ দুঃখে অভিভূত হলেন এবং ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নিজেদের ধিক্কার দিয়ে রোদন করতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা জীবিত থাকতে মহাত্মা ধৃতরাষ্ট্রের অনাথের ন্যার মৃত্যু হ’ল! অগ্নির তুলা কৃতঘ্ন কেউ নেই, অর্জুন খাঁণ্ডবদাহ ক’রে ভিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবেশী অগ্নিকে বৃথা তৃপ্ত করেছিলেন। সেই অর্জুনের জননীকেই তিনি দগ্ধ করলেন! রাজর্ষি ধৃতরাষ্ট্র সেই মহাবনে মন্ত্রপূত অগ্নি রক্ষা করতেন, তথাপি বৃথাগ্নিতে কেন তাঁদের মৃত্যু হ’ল?
নারদ বললেন, তাঁরা বৃথাগ্নিতে দগ্ধ হন নি। ধৃতরাষ্ট্র বনপ্রবেশের পূর্বে যে যজ্ঞ করেছিলেন যাজকগণ তার অগ্নি এক নির্জন বনে নিক্ষেপ করেছিলেন; সেই অগ্নিই বর্ধিত হয়ে সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়। ধৃতরাষ্ট্র নিজের যজ্ঞাগ্নিতে জীবন বিসর্জন
- ↑ ৭-পরিচ্ছেদ পাদটীকা দ্রষ্টব্য।