পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৪৩

থেকে রাজারা স্বয়ংবরসভায় উপস্থিত হয়েছেন। যখন পরিচয় দেবার জন্য রাজাদের নামকীর্তন করা হ’ল তখন কন্যারা ভীষ্মকে বৃদ্ধ ও একাকী দেখে তাঁর কাছ থেকে সরে গেলেন। সভায় যে সকল হীনমতি রাজা ছিলেন তাঁরা হেসে বললেন, এই পরম ধর্মাত্মা পলিতকেশ নির্লজ্জ বৃদ্ধ এখানে কেন এসেছে? যে প্রতিজ্ঞাপালন করে না তাকে লোকে কি বলবে? ভীষ্ম বৃথাই ব্রহ্মচারী খ্যাতি পেয়েছেন।

 উপহাস শুনে ভীষ্ম ক্রুদ্ধ হয়ে তিনটি কন্যাকে নিজের রথে তুলে নিলেন এবং জলদগম্ভীরস্বরে বললেন, রাজগণ, বহুপ্রকার বিবাহ প্রচলিত আছে, কিন্তু ধর্মবাদিগণ বলেন যে স্বয়ংবরসভায় বিপক্ষদের পরাভূত ক’রে কন্যা হরণ করাই ক্ষত্রিয়ের পক্ষে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। আমি এই কন্যাদের নিয়ে যাচ্ছি, তোমাদের শক্তি থাকে তো যুদ্ধ কর। রাজারা ক্রোধে ওষ্ঠ দংশন ক’রে সভা থেকে উঠলেন এবং অলংকার খুলে ফেলে বর্ম ধারণ ক’রে নিজ নিজ রথে উঠে ভীষ্মকে আক্রমণ করলেন। সর্বশস্ত্রবিশারদ ভীষ্মের সঙ্গে যুদ্ধে রাজারা পরাজিত হলেন, কিন্তু মহারথ শাল্বরাজ তাঁর পশ্চাতে যেতে যেতে বললেন, থাম, থাম। ভীষ্মের শরাঘাতে শাল্বের সারথি ও অশ্ব নিহত হ’ল, শাল্ব ও অন্যান্য রাজারা যুদ্ধে বিরত হয়ে নিজ নিজ রাজ্যে চ’লে গেলেন। বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম তিন কন্যাকে পত্রবধূ, কনিষ্ঠা ভগিনী বা দুহিতার ন্যায় যত্নসহকারে হস্তিনাপুরে নিয়ে এলেন।

 ভীষ্ম বিবাহের উদ্‌যোগ করছেন জেনে কাশীরাজের জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বা[১] হাস্য ক’রে তাঁকে বললেন, আমি স্বয়ংবরে শাল্বরাজকেই বরণ করতাম, তিনিও আমাকে চান, আমার পিতারও তাতে সম্মতি আছে। ধর্মজ্ঞ, আপনি ধর্ম পালন করুন। ভীষ্ম ব্রাহ্মণদের সঙ্গে মন্ত্রণা ক’রে অম্বাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠালেন এবং অন্য দুই কন্যা অম্বিকা ও অম্বালিকার সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ দিলেন।

 বিচিত্রবীর্য সেই দুই সন্দরী পত্নীকে পেয়ে কামাসক্ত হয়ে পড়লেন। সাত বৎসর পরে তিনি যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলেন। সুহৃৎ ও চিকিৎসকগণ প্রতিকারের বহু চেষ্টা করলেন, কিন্তু আদিত্য যেমন অস্তাচলে যান বিচিত্রবীর্যও সেইরূপ যমসদনে গেলেন।

  1. অম্বার পরবর্তী ইতিহাস উদ্‌যোগপর্ব ২৭-পরিচ্ছেদে আছে।