পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৌষলপর্ব
৬৭৩

ব’সে রোদন করতে লাগলেন। সাত্যকি উঠে বললেন, সুমধ্যমা, আমি শপথ করছি, ধৃষ্টদ্যুম্ন শিখণ্ডী ও দ্রৌপদীপুত্রগণ যেখানে গেছেন কৃতবর্মাকে সেখানে পাঠাব; এই পাপাত্মা অশ্বত্থামার সাহায্যে তাঁদের সুপ্তাবস্থায় হত্যা করেছিল। এই ব’লে তিনি খড়্‌গাঘাতে কৃতবর্মার শিরশ্ছেদ ক’রে অন্যান্য লোককেও বধ করতে লাগলেন।

 তখন ভোজ ও অন্ধকগণ সাত্যকিকে বেষ্টন ক’রে উচ্ছিষ্ট ভোজনপাত্র দিয়ে প্রহার করতে লাগলেন। কালের বিপর্যয় বুঝে কৃষ্ণ ক্রুদ্ধ হলেন না। রুক্মিণীপুত্র প্রদ্যুম্ন সাত্যকিকে রক্ষা করবার জন্য যুদ্ধ করতে লাগলেন, কিন্তু সাত্যকির সহিত তিনিও নিহত হলেন। তখন কৃষ্ণ এক মুষ্টি এরকা[১] নিলেন, তা বজ্রতুল্য লৌহমুষলে পরিণত হ’ল। সেই মুষলের আঘাতে তিনি সম্মুখস্থ সকলকে বধ করতে লাগলেন। সেখানকার সমস্ত এরকাই মুষল হয়ে গেল; তার দ্বারা অন্ধক ভোজ বৃষ্ণি প্রভৃতি যাদবগণ পরস্পরের হত্যায় প্রবৃত্ত হলেন এবং প্রমত্ত হয়ে পিতা পুত্রকে, পুত্র পিতাকে নিপাতিত করলেন। অগ্নিতে পতিত পতঙ্গের ন্যায় সকলে মরতে লাগলেন, কারও পলায়নের বুদ্ধি হ’ল না। কৃষ্ণের সমক্ষেই প্রদ্যুম্ন শাম্ব চারুদেষ্ণ অনিরুদ্ধ গদ প্রভৃতি নিহত হলেন। তখন বভ্রু ও দারুক বললেন, ভগবান, বহু লোককে বিনষ্ট করেছেন, এখন আমরা বলরামের কাছে যাই চলুন।

৩। বলরাম ও কৃষ্ণের দেহত্যাগ

 বলরামের নিকটে এসে কৃষ্ণ দেখলেন, তিনি নির্জন স্থানে বৃক্ষমূলে ব’সে চিন্তা করছেন। কৃষ্ণ দারুককে বললেন, তুমি সত্বর হস্তিনাপুরে গিয়ে যাদবগণের নিধনসংবাদ অর্জুনকে জানাও এবং তাঁকে শীঘ্র এখানে নিয়ে এস। দারুক তখনই যাত্রা করলেন। তার পর কৃষ্ণ বভ্রুকে বললেন, তুমি নারীদের রক্ষা করতে যাও, যেন দস্যুরা তাঁদের আক্রমণ না করে। বভ্রু যাত্রার উপক্রম করতেই এক ব্যাধের মুদ্‌গর সহসা নিপতিত হয়ে তাঁর প্রাণহরণ করলে। তখন কৃষ্ণ তাঁর অগ্রজকে বললেন, আমি নারীদের রক্ষার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি, আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করুন।

 কৃষ্ণ তাঁর পিতা বসুদেবের কাছে গিয়ে বললেন, ধনঞ্জয়ের না আসা পর্যন্ত আপনি নারীদের রক্ষা করুন। বলরাম বনমধ্যে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন, আমি তাঁর কাছে যাচ্ছি। আমি কুরুপাণ্ডবযুদ্ধে এবং এখানে বহু লোকের নিধন দেখেছি।

  1. হোগলা বা তজ্জাতীয় তৃণ।