পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭৪
মহাভারত

যাদবশূন্য এই পুরীতে আমি থাকতে পারব না, বনবাসী হয়ে বলরামের সঙ্গে তপস্যা করব। এই ব’লে কৃষ্ণ বসুদেবের চরণবদনা করলেন এবং নারী ও বালকদের ক্রন্দন শুনে বললেন, সব্যসাচী এখানে আসছেন, তিনি তোমাদের দুঃখমোচন করবেন।

 বনে এসে কৃষ্ণ দেখলেন, বলরাম সেখানে ব’সে আছেন, তাঁর মুখ থেকে একটি শ্বেতবর্ণ সহস্রশীর্ষ রক্তমুখ মহানাগ নির্গত হয়ে সাগরে প্রবেশ করছেন। সাগর, দিব্য নদী সকল, বাসুকি কর্কোটক তক্ষক প্রভৃতি নাগগণ, এবং স্বয়ং বরুণ প্রত্যুদ্‌গমন ক’রে স্বাগতপ্রশ্ন ও পাদ্য-অর্থ্যাদি দ্বারা সেই মহানাগের সংবর্ধনা করলেন।

 অগ্রজ বলদেবের দেহত্যাগ দেখে কৃষ্ণ সেই বনে কিছুক্ষণ বিচরণের পর ভূমিতে উপবেশন করলেন এবং গান্ধারী ও দুর্বাসার শাপের বিষয় চিন্তা করতে লাগলেন। অনন্তর তাঁর প্রয়াণকাল আগত হয়েছে এই বিবেচনায় তিনি ইন্দ্রিয়গ্রাম সংযম এবং মহাযোগ আশ্রয় ক’রে শয়ান হলেন। সেই সময়ে জরা নামে এক ব্যাধ মৃগ মনে করে তাঁর পদতল শরবিদ্ধ করলে। তার পর সে নিকটে এসে যোগমগ্ন পীতাম্বর চতুর্ভুজ কৃষ্ণকে দেখে ভয়ে তাঁর চরণে পতিত হ’ল। মহাত্মা কৃষ্ণ ব্যাধকে আশ্বাস দিলেন এবং নিজ কান্তি দ্বারা আকাশ ব্যাপ্ত করে ঊর্ধ্বে স্বকীয় লোকে প্রয়াণ করলেন। দেবতা ঋষি চারণ সিদ্ধ গন্ধর্ব প্রভৃতি সেই ঈশ্বরের অর্চনা করলেন, মুনিশ্রেষ্ঠগণ ঋক্ মন্ত্র উচ্চারণ করলেন, এবং ইন্দ্র তাঁকে সানন্দে অভিনন্দিত করলেন।

৪। অর্জুনের দ্বারকায় গমন ও প্রত্যাবর্তন

 দারুক হস্তিনাপুরে গিয়ে দ্বারকার ঘটনাবলী জানালেন। ভোজ অন্ধক কুকুর ও বৃষ্ণি বংশীয় বীরগণের নিধন শুনে পাণ্ডবগণ শোকাকুল হলেন। যদুকুল ধ্বংস হয়েছে এই আশঙ্কায় অর্জুন তাঁর মাতুল বসুদেবকে দেখবার জন্য তখনই যাত্রা করলেন। দ্বারকায় উপস্থিত হয়ে তিনি দেখলেন সেই নগরী পতিহীনা রমণীর ন্যায় শ্রীহীন হয়েছে। কৃষ্ণসখা অর্জুনকে দেখে কৃষ্ণের ষোল হাজার স্ত্রী উচ্চকণ্ঠে রোদন করতে লাগলেন। অর্জুনের চক্ষু বাষ্পাকুল হ’ল, তিনি সেই পতিপুত্রহীনা নারীদের দিকে চাইতে পারলেন না, সশব্দে রোদন ক’রে ভূপতিত হলেন। রুক্মিণী সত্যভামা প্রভৃতি তাঁকে উঠিয়ে স্বর্ণময় পীঠে বসালেন এবং তাঁকে বেষ্টন ক’রে বিলাপ করতে লাগলেন।