পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭৬
মহাভারত

হও, নতুবা আমার শরে ছিন্ন হয়ে সকলে মরবে। দস্যুগণ নিবৃত্ত হ’ল না দেখে অর্জুন তাঁর গাণ্ডীব নিলেন এবং অতি কষ্টে জ্যারোপণ করলেন, কিন্তু কোনও দিব্যাস্ত্র স্মরণ করতে পারলেন না। তিনি এবং সহগামী যোদ্ধারা বাধা দেবার চেষ্টা করলেও দস্যুরা নারীদের হরণ করতে লাগল, কোনও কোনও নারী স্বেচ্ছায় তাদের কাছে গেল। অর্জুনের বাণ নিঃশেষ হ’লে তিনি ধনুর অগ্রভাগ দিয়ে প্রহার করতে লাগলেন, কিন্তু সেই ম্লেচ্ছ দস্যুগণ তাঁর সমক্ষেই বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশীয় সুন্দরীদের হরণ ক’রে নিয়ে গেল। অর্জুন তাঁর দূরদৃষ্ট দেখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন এবং অবশিষ্ট নারীদের নিয়ে কুরুক্ষেত্রে এলেন।

 কৃতবর্মার পুত্র এবং ভোজ নারীগণকে মার্তিকাবত নগরে এবং সাত্যকির পুত্রকে সরস্বতী নদীর নিকটস্থ প্রদেশে রেখে অর্জুন অবশিষ্ট বালক বৃদ্ধ ও রমণীগণকে ইন্দ্রপ্রস্থে আনলেন। কৃষ্ণের পৌত্র বজ্রকে তিনি ইন্দ্রপ্রস্থের রাজ্য দিলেন। অক্রূরের পত্নীরা প্রব্রজ্যা নিলেন। কৃষ্ণের পত্নী রুক্মিণী গান্ধারী শৈব্যা হৈমবতী ও জাম্ববতী অগ্নিপ্রবেশ করলেন। সত্যভামা ও কৃষ্ণের অন্যান্য পত্নীগণ হিমালয় অতিক্রম ক’রে কলাপ গ্রামে গিয়ে কৃষ্ণের ধ্যান করতে লাগলেন। দ্বারকাবাসী পুরুষগণকে বজ্রের নিকটে রেখে অর্জুন সজলনয়নে ব্যাসদেবের আশ্রমে এলেন।

 অর্জুনকে দেখে ব্যাস বললেন, তোমাকে এমন শ্রীহীন দেখছি কেন? তোমার গাত্রে কি কেউ নখ কেশ বস্ত্রাঞ্চল বা কলসের জল দিয়েছে? তুমি কি রজস্বলাগমন বা ব্রহ্মহত্যা করেছ, না যুদ্ধে পরাজিত হয়েছ? অর্জুন দ্বারকার সমস্ত ঘটনা, কৃষ্ণ-বলরামের মৃত্যু, এবং দস্যু হস্তে তাঁর পরাজয়ের বিবরণ দিলেন। পরিশেষে তিনি বললেন, সেই পদ্মপলাশলোচন শঙ্খচক্রগদাধর শ্যামতনু চতুর্ভুজ পীতাম্বর পরমপুরুষ, যিনি আমার রথের অগ্রভাগে থাকতেন, সেই কৃষ্ণকে আমি দেখতে পাচ্ছি না; আর আমার জীবনধারণের ফল কি? তাঁর অদর্শনে আমি অবসন্ন হয়েছি, আমার শরীর ঘুরছে, আমি শান্তি পাচ্ছি না। মুনিসত্তম, বলন এখন আমার কি কর্তব্য।

 ব্যাস বললেন, কুরুশার্দূল, বঞ্চি-অন্ধক বীরগণ ব্রহ্মশাপে বিনষ্ট হয়েছেন, তাঁদের জন্য শোক ক’রো না। কৃষ্ণ জানতেন যে তাঁদের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, সেজন্য নিবারণে সমর্থ হয়েও উপেক্ষা করেছেন। তিনি পৃথিবীর ভার হরণ ক’রে দেহত্যাগ ক’রে স্বীয় ধামে গেছেন। পুরুষশ্রেষ্ঠ, ভীম ও নকুল-সহদেবের সাহায্যে তুমি মহৎ দেবকার্য সাধন করেছ, যেজন্য পৃথিবীতে এসেছিলে তা সম্পন্ন ক’রে কৃতকৃত্য হয়েছ; তোমাদের কাল পূর্ণ হয়েছে, এখন প্রস্থান করাই শ্রেয়। তোমার অস্ত্রসমূহের