পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মহাপ্রস্থানিকপর্ব

১। মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠিরাদি

 অর্জুনের মুখে যাদবগণের ধ্বংসের বিবরণ শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, কালই সকল প্রাণীকে বিনষ্ট করেন, তিনি আমাকেও আকর্ষণ করছেন; এখন তোমরা নিজ কর্তব্য স্থির কর। ভীমার্জুন নকুল-সহদেব সকলেই বললেন, আমরাও কালের প্রভাব অতিক্রম করতে চাই না।

 পরীক্ষিৎকে রাজ্যে অভিষিক্ত ক’রে এবং যুযুৎসুর উপর রাজ্যপালনের ভার দিয়ে যুধিষ্ঠির সুভদ্রাকে বললেন, তোমার পৌত্র কুরুরাজ রূপে হস্তিনাপুরে থাকবেন। যাদবগণের একমাত্র বংশধর কৃষ্ণপৌত্র বজ্রকে আমি ইন্দ্রপ্রস্থে অভিষিক্ত করেছি, তিনি অবশিষ্ট যাদবগণকে পালন করবেন। তুমি এদের রক্ষা ক’রো, যেন অধর্ম না হয়। অনন্তর যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভ্রাতারা বসুদেব ও কৃষ্ণ-বলরাম প্রভৃতির যথাবিধি শ্রাদ্ধ করলেন এবং কৃষ্ণের উদ্দেশে ব্যাস নারদ মার্কণ্ডেয় ভরদ্বাজ ও যাজ্ঞবল্ক্যকে ভোজন করিয়ে ব্রাহ্মণগণকে বহু ধনরত্ন দান করলেন। যুধিষ্ঠির কৃপাচার্যকে পরীক্ষিতের শিক্ষার ভার দিলেন এবং প্রজাগণকে আহ্বান ক’রে মহাপ্রস্থানের অভিপ্রায় জানালেন। প্রজারা উদ্‌বিগ্ন হয়ে বারণ করতে লাগল, কিন্তু যুধিষ্ঠির তাঁর সংকল্প ত্যাগ করলেন না।

 যুধিষ্ঠির, তাঁর ভ্রাতৃগণ, এবং দ্রৌপদী সমস্ত আভরণ ত্যাগ ক’রে বল্কল পরিধান করলেন এবং যজ্ঞ ক’রে তার অগ্নি জলে নিক্ষেপ করলেন। তার পর তাঁরা হস্তিনাপুর থেকে যাত্রা করলেন। নারীগণ উচ্চকণ্ঠে রোদন করতে লাগলেন। পুরবাসী ও অন্তঃপুরবাসিনীগণ বহু দূর পর্যন্ত অনুগমন করলেন, কিন্তু কেউ পাণ্ডবগণকে নিবৃত্ত হ’তে বললেন না। নাগকন্যা উলূপী গঙ্গায় প্রবেশ করলেন, চিত্রাঙ্গদা মণিপুরে গেলেন, অন্যান্য পাণ্ডবপত্নীগণ পরীক্ষিতের কাছে রইলেন।

 পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী উপবাস ক’রে পূর্ব দিকে চললেন, একটি কুকুর তাঁদের পিছনে যেতে লাগল। তাঁরা বহু দেশ অতিক্রম ক’রে লোহিত্য সাগরের তীরে উপস্থিত হলেন। আসক্তিবশত অর্জুন এপর্যন্ত তাঁর গাণ্ডীব ধনু ও দুই অক্ষয় তুণ ত্যাগ করেন নি। এখন অগ্নি মূর্তিমান হয়ে পথরোধ ক’রে বললেন, পাণ্ডবগণ,