পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাপ্রস্থানিকপর্ব
৬৭৯

আমার কথা শোন, আমি অগ্নি, পূর্বে অর্জুন ও নারায়ণের প্রভাবে খাণ্ডব দগ্ধ করেছিলাম। অর্জুনের আর গাণ্ডীবের প্রয়োজন নেই; আমি বরুণের কাছ থেকে এই ধনু এনে দিয়েছিলাম, এখন ইনি বরুণকে প্রত্যর্পণ করুন। কৃষ্ণের চক্রও এখন প্রস্থান করেছে, যথাকালে আবার তাঁর কাছে যাবে। এই কথা শুনে অর্জুন তাঁর গাণ্ডীব ধনু ও দুই তূণ জলে নিক্ষেপ করলেন, অগ্নিও অন্তর্হিত হলেন। পাণ্ডবগণ পৃথিবী প্রদক্ষিণের ইচ্ছায় প্রথমে দক্ষিণ দিকে চললেন, তার পর লবণসমুদ্রের উত্তর তীর দিয়ে পশ্চিম দিকে এলেন, এবং সাগর গ্লাবিত দ্বারকাপুরী দেখে উত্তর দিকে যাত্রা করলেন।

২। দ্রৌপদী সহদেব নকুল অর্জুন ও ভীমের মৃত্যু

 পাণ্ডবগণ হিমালয় পার হয়ে বালুকার্ণব ও মেরুপর্বত দর্শন ক’রে যোগযুক্ত হয়ে শীঘ্র চলতে লাগলেন। যেতে যেতে সহসা দ্রৌপদী যোগভ্রষ্ট হয়ে ভূপতিত হলেন। ভীম যুধিষ্ঠিরকে বললেন, দ্রুপদনন্দিনী কৃষ্ণা কোনও অধর্মাচরণ করেন নি, তবে কেন ভূপতিত হলেন? যুধিষ্ঠির বললেন, ধনঞ্জয়ের উপর এঁর বিশেষ পক্ষপাত ছিল, এখন তারই ফল পেয়েছেন। এই বলে যুধিষ্ঠির সমাহিতমনে চলতে লাগলেন, দ্রৌপদীর দিকে আর দৃষ্টিপাত করলেন না।

 কিছুক্ষণ পরে সহদেব প’ড়ে গেলেন। ভীম বললেন, এই মাদ্রীপুত্র নিরহংকার ছিলেন এবং সর্বদা আমাদের সেবা করতেন, তবে ভূপতিত হলেন কেন? যুধিষ্ঠির বললেন, সহদের মনে করতেন ওঁর চেয়ে বিজ্ঞ আর কেউ নেই। এই বলে যুধিষ্ঠির অগ্রসর হলেন।

 তার পর নকুল প’ড়ে গেলেন! ভীম বললেন, আমাদের এই অতুলনীয় রূপবান ভ্রাতা ধর্ম থেকে কখনও চ্যুত হন নি এবং সর্বদা আমাদের আজ্ঞাবহ ছিলেন; ইনি ভূপতিত হলেন কেন? যুধিষ্ঠির বললেন, নল মনে করতেন তাঁর তুল্য রূপবান কেউ নেই। বৃকোদর, তুমি আমার সঙ্গে এস, নকুল তাঁর কর্মের বিধিনির্দিষ্ট ফল পেয়েছেন।

 দ্রৌপদী ও নকুল-সহদেবের পরিণাম দেখে অর্জুন শোকার্ত হয়ে চলছিলেন, কিছু দূর গিয়ে তিনি ও প’ড়ে গেলেন। ভীম বললেন, ইনি পরিহাস ক’রেও কখনও মিথ্যা বলেন নি, তবে কেন এঁর এমন দশা হ’ল? যুধিষ্ঠির বললেন, অর্জুন সর্বদা গর্ব করতেন যে এক দিনেই সকল শত্রু বিনষ্ট করবেন, কিন্তু তা পারেন নি; তা ছাড়া